শিক্ষাই মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ শিক্ষা বিস্তারের মূল কারিগর হলেন সহকারী শিক্ষক। নতুন পরিবেশে নির্বাক দৃষ্টিতে তাঁদের দিকেই তাকিয়ে থাকা শিশুদেরকে তাঁরা পরম স্নেহে এ শিক্ষা দেন যে, স্বপ্নের সীমানাটা কীভাবে বড় করতে হয়!
বর্তমান নিয়োগ বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক যেহেতু একই যোগ্যতা ও একই প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করেন, সুতরাং শুধু পদ দুটির কারণে কয়েকধাপ বেতন স্কেলের পার্থক্য সৃষ্টি করে সহকারীদের বঞ্চনায় রাখা সমীচীন নয়। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান শিক্ষকের ঠিক পরের ধাপে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নির্ধারণের নিমিত্তে আর্থিক অক্ষমতার দোহাই নয় বরং জাতি গঠনের এই আঁতুরঘরগুলোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা খুব বেশি দরকার।
নার্সরা এইচএসসি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে ১০ম গ্রেড, এসএসসি ও কৃষি ডিপ্লোমা নিয়ে ১০ম গ্রেড, সচিবালয়ের ক্যাটালগাররা ১৪ তম থেকে ১০ম গ্রেড, বিভিন্ন অফিসের উচ্চমান সহকারীরা ১০ম গ্রেড ও প্রধান সহকারীরা ১০ম গ্রেড পান। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকরা স্নাতকোত্তর ও ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে) নিয়ে ১৪তম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হচ্ছে। কেন অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট ও প্রাথমিক সহকারীদের মধ্যে গ্রেডের এত পার্থক্য থাকবে? সূর্যের আলোয় যেমন সবার সমান অধিকার, তেমনি বেতন গ্রেডের অধিকারও সবার জন্য সমান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ফিনল্যান্ডের বিশ্বসেরা হওয়ার মূল কারণগুলো আমরা যদি একটু লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাই (ক) প্রাথমিক শিক্ষকদের সর্বোচ্চ বেতনভাতাসহ সামাজিক উচ্চ মর্যাদা দান, (খ) খেলার মাধ্যমে শিক্ষা বা গেমিং এডুকেশন, (গ) শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:২০, (ঘ) একজন শিক্ষক বছরে ছয়শ’ কর্মঘণ্টা পরিশ্রম করে যা দৈনিক ৪ ঘণ্টার মতো, (ঙ) বয়ঃসন্ধিকালে সকালের ঘুম খুবই প্রয়োজন বলে স্কুলগুলো দেরিতে শুরু করে দুপুরেই শেষ এবং এর মধ্যে কয়েকটি বিরতি থাকে।
যাঁরা তৃণমূলে কাজ করছেন, সমস্যার গভীরে যাওয়া তাঁদের পক্ষে যতটা সহজ, অন্যের পক্ষে তা নয়। ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে এখনি উপযুক্ত সময় প্রাথমিক শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের গুরুত্বপূর্ণ যে দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের সুনজর দেয়া। দাবিগুলো হলো- (ক) সহকারীদের ১১তম ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদান, (খ) শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারীদের জন্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ রাখা, (গ) ছাত্র ও শিক্ষকদের কথা বিবেচনা করে বিদ্যালয়ে সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত করা।
সর্বোপরি বলতে চাই, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হোক সহকারী শিক্ষকদের ১১তম ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, কন্দর্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]