রশিতে বাঁধা বিসিএস ক্যাডার বিজ্ঞানীর জীবন - দৈনিকশিক্ষা

রশিতে বাঁধা বিসিএস ক্যাডার বিজ্ঞানীর জীবন

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি |

স্ত্রী-সন্তান আর সহায়-সম্পদ সবই আছে তার। তারপরও বিজ্ঞানী ড. মোজাফ্ফর হোসেনের শেষ জীবনটা কাটছে চরম অবহেলা আর অনাদরে। মানসিক ভারসাম্য হারানোয় তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এক গৃহকর্মী তার দেখাশুনা করেন। স্ত্রী-সন্তানরা থাকেন ঢাকায়। 

নির্জন বাড়িতে নিঃসঙ্গ আর বন্দী জীবন কাটছে এ মানুষটির। অথচ ড. মোজাফ্ফরের অবসর জীবনটা কাটানোর কথা স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে সুখে-শান্তিতে।

প্রতিবেশী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার ছিলেন ড. মোজাফ্ফর হোসেন। বিসিএস ক্যাডার মোজাফ্ফর পিএইচডি করেন রসায়নের ওপর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি ছাত্র ছিলেন তিনি। চাকরিতে থাকা অবস্থাতেই তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন মোজাফ্ফর। পরিবারের পক্ষ থেকে কিছুদিন চিকিৎসা করানো হলেও সুফল মেলেনি। তাই গত জানুয়ারি মাসে তাকে মানিকগঞ্জ শহরের বান্দুটিয়া গ্রামের বাড়িতে রেখে গেছেন স্ত্রী-সন্তানরা।

বান্দুটিয়া গ্রামের মৃত মোকছেদ মোল্লার ছেলে ডক্টর মোজাফ্ফর হোসেনের বাপ-দাদারা প্রভাবশালী এবং সম্পদশালী ছিলেন। গ্রামের সবাই বাড়িটিকে মাতবর বাড়ি বলেই পরিচয় দেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশাল উঠানজোড়া বাড়িটিতে দুটি ঘর। লোকজন না থাকায় চারপাশেই নীরব পরিবেশ। বড় ঘরের বারান্দার একটি বেঞ্চে কোমরে রশি বেঁধে রাখা হয়েছে মোজাফ্ফরকে। পরণে একটি গেঞ্জি এবং হাফপ্যান্ট। হাত-পা ফোলা। চারপাশে মাছি উড়ছে।


মোজাফ্ফরকে দেখাশুনাকারী গৃহকর্মী রেকেয়া বেগম জানান, মোজাফ্ফর কাউকে ভালোমতো চিনতে পারেন না। মাঝে মধ্যে দু’একটি শুদ্ধ বাংলা বললেও বেশির ভাগ কথাই বোঝা যায় না। পায়খানা-প্রস্রাবেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তার। তবে খাবার দেখলে সে পাগল হয়ে যায়। সব সময় শুধু খেতে চান। এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে চান বলেই রশি দিয় বেঁধে রাখা হয়।

কথা হয় মোজাফ্ফরের চাচাতো ভাই আব্দুল কুদ্দুস, ভাতিজা আব্দুল মান্নান আর প্রতিবেশী লেবু মিয়ার সঙ্গে। তারা জানান, বিজ্ঞানী মোজাফ্ফর খুবই ভালো মানুষ এবং সৎ লোক ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তার স্ত্রীর নাম লিপি বেগম। দুই ছেলে। বড় ছেলে অর্ণব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ছোট ছেলে আরিয়ান এইচএসসিতে লেখাপড়া করেন। প্রায় তিন মাস ধরে মোজাফ্ফরকে গ্রামের বাড়িতে রেখে গেছেন স্ত্রী-সন্তানরা। ঠিকমতো খোঁজ খবরও নেন না।

তারা আরও জানান, ড. মোজাফ্ফরের অনেক সহায়-সম্পদ ছিল। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর মোজাফ্ফরের পেনশনের টাকাসহ সহায়-সম্পত্তি স্ত্রী আর দুই ছেলে লিখে নিয়েছেন। এখন বিনা চিকিৎসায় তাকে গ্রামের বাড়িতে ফেলে রেখে তারা ঢাকায় বসবাস করছেন। রাতে মোজাফ্ফরকে মেঝেতেই রাখা হয়, কোনো বিছানাপত্র নেই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন ড. মোজাফ্ফর হোসেন। তার সঙ্গে একই হলে থাকতেন আইনজীবী আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রগতিশীল মুক্তমনার একজন মানুষ ছিলেন মোজাফ্ফর। অবসরে যাওয়ার পর অনেক টাকা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর তার স্ত্রী সন্তানরা তাকে অমানবিকভাবে ফেলে রাখবে এটা কল্পনার বাইরে। একটা মানুষ দেশের জন্য, জাতির জন্য অবদান রেখেছেন এবং পরিবারের জন্য তো বটেই তাকে এভাবে চিকিৎসা না করিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে যা মেনে নেয়া যায় না। তাই বিষয়টি জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে অবগত করার কথা জানান তিনি।

ড. মোজাফ্ফরের স্ত্রী লিপি বেগম জানান, মোজাফ্ফরকে সুস্থ করতে অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্ত ডাক্তাররা বলেছেন তিনি কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না। ঢাকার বাসায় তাকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তিনি পাগলের মতো আচরণ করে। সারারাত ঘুমান না। জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। এতে প্রতিবেশীরা বিরক্ত হন এবং ছেলেদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই তাকে খোলা আলো বাতাসে রাখা হয়েছে। তবে সবসময় তার খোঁজ খবর নেন বলে জানান লিপি বেগম।

মোজাফ্ফরের বন্ধু ডা. সাঈদ-আল মামুন জানান, সম্ভবত মোজাফ্ফর অ্যালজেইমার রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্তদের স্মরণশক্তি কমে যায়। অতীত বর্তমানের অভিজ্ঞতা ভুলে যায়। কাউকে চিনতে পারে না। অনেক সময় চিল্লাপাল্লা করে।

কিন্তু এভাবে বিনা চিকিৎসায় তাকে নিঃসঙ্গভাবে ফেলে রাখলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। তাই তাকে পরিবারের সদস্যদের সময় দেয়া উচিত। পাশাপাশি ভালো নিউরোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে তাকে রাখতে হবে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045731067657471