প্রায় তিন দশক পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রশাসন। নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো। দীর্ঘ দিন যেসব সংগঠন 'নিষ্ক্রিয়' ছিল কিংবা কমিটি ছিল না, সেসব সংগঠনও নতুন কমিটি দিয়ে নানা তৎপরতা দেখাচ্ছে। রাকসুর আশায় সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়েছে বলছেন সংগঠনের নেতারা, সবার উপস্থিতিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সচেতন মহল।
গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা যাচাই করলে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ক্ষমতা দেখিয়েছে ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তাদের পাশাপাশি বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট কিছুটা সক্রিয় ছিল। তবে তাদের উপস্থিতি ততটা জোরাল নয়। অন্যদিকে দেশের অন্যতম বৃহত্তর ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলও গত পাঁচ বছরে তেমন সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি।
জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রাকসু নির্বাচন দিতে নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের এ উদ্যোগের পর থেকে চাঙ্গা হতে থাকে সব রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। প্রত্যেক সংগঠনের নেতারা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে নিষ্ক্রিয় থাকার পর রাকসু আলোচনার সুযোগে ক্যাম্পাসে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে হল ও অনুষদে আহ্বায়ক কমিটি দিলেও পরবর্তীকালে ক্যাম্পাসে তাদের উপস্থিতি তেমন লক্ষ করা যায়নি। আহ্বায়ক কমিটি পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটির রূপও নেয়নি। গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে সংগঠনটি নতুন কমিটি দিয়েছে। অন্যদিকে ১৭ জুলাই নতুন কমিটি দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কমিটি দেয়ার প্রায় তিন বছর পর চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি কমিটি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী। রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক কর্মে পিছিয়ে নেই ইসলামিক শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারাও।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, 'রাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। দীর্ঘদিন এটি বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতায় ছাত্র সংগঠনগুলোও সক্রিয় হয়েছে। নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করে তারাই নির্বাচিত হবে।'
শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, 'কমিটি দেয়া সংগঠনের চলমান প্রক্রিয়া। সে জন্য একটি হলে কমিটি দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেজন্য আমাদের উপস্থিতি কম ছিল। তবে এসব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাংগাঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, 'বড় সংগঠনগুলোর পাশাপাশি অন্য সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক। কেননা ছোট ছাত্র সংগঠনগুলোর (রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর অঙ্গ-সংগঠন ব্যতীত) নেতাকর্মীরা গণতন্ত্রের জন্যই রাজনীতি করেন। বড় দলগুলোতে গেলে পেশিশক্তি প্রদর্শন এবং নানা রকম সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু ছোটগুলোতে সেটি থাকে না। সেজন্য এসব সংগঠনে কর্মী কম আসে, আর সেগুলোতে বেশি থাকে। রাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি সংগঠনগুলোর গণতান্ত্রিক সক্ষমতা প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে।'