আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রায় ৬ মাস পরে ১৪ কিশোর অপরাধীর বিরুদ্ধে আগামী ৮ই জানুয়ারী চার্জ গঠনের কথা রয়েছে। ২৮শে নভেম্বর মামলার কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য করেন আদালত।
ইতিমধ্যে মামলার প্রাপ্তবয়ষ্ক ১০ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হওয়ার পরই পুরো মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার ২ মাস পরে ২৪ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে আসামিদের দুটি ভাগে আলাদা করা হয়।
এর মধ্যে মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়ষ্ক ১০ জন ও কিশোর ১৪ জনসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে আলাদা চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিটভুক্ত কিশোর অপরাধীদের ব্যাপারে আগামী ৮ই জানুয়ারী শুনানি শেষে চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন শিশু আদালতের বিচারক মোঃ হাফিজুর রহমান। নিহত রিফাতের বাবা ও মামলার বাদি দুলাল শরীফের প্রত্যাশা, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং তার ছেলের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার।
রিফাত হত্যায় সবচেয়ে আলোচিত আসামি নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। রিফাত হত্যার পর থানায় দায়েরকৃত মামলায় মিন্নিই ছিলেন একমাত্র প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী। পরবর্তিতে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মিন্নিকে গ্রেপ্তার ও পরে উচ্চাদালতের নির্দেশে জামিন দেয়া হয়। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের দাবি, তার মেয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার এবং প্রকৃত আসামিদের বাঁচানোর জন্যই তার মেয়েকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে বাদীপক্ষের নিয়োজিত আইনজীবীর অভিযোগ, বিচারিক কার্যক্রম ব্যহত করতে ইতিমধ্যেই আসামিদের পক্ষ থেকে পায়তারা শুরু হয়েছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে জামিনে থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান বাদীপক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তারা ন্যায় বিচারের স্বার্থে উচ্চাদালতের স্মরণাপন্ন হবেন বলে জানান মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারি আসলাম ও অন্য আসামিপক্ষের আইনজীবী মোস্তফা কাদের।
এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি সনজিব দাস বলেন, মামলার বিচারিক কার্যক্রম সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগীতা অব্যহত রয়েছে।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় বিচারিক কার্যক্রম শুরুর অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে ৭৫ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য নেয়া শুরু হবে। এর মধ্যে আগামী ৮ই জানুয়ারী ৩৭ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করবেন আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড-রিফাত ফরায়েজী বাহিনী। ওই দিন বিকেলে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়। এরপর ২রা জুলাই নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ধরা পড়েন রিফাত ফরাজীসহ কয়েকজন।