রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দেখিয়ে ক্যাসিনোর টাকা ব্যাংকে - দৈনিকশিক্ষা

রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দেখিয়ে ক্যাসিনোর টাকা ব্যাংকে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা খুলে অঢেল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছিলেন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খালেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ৮০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খালেদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে থাকা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা এরই মধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে। ওই সব অ্যাকাউন্টে লেনদেন হওয়া অর্থ দিয়ে খালেদ দেশে সম্পদ গড়েছেন, নাকি বিদেশে পাচার করেছেন, সেটি অনুসন্ধান শুরু করেছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। একই সঙ্গে এসব অর্থ আয়ের উৎস কী তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে এই লেনদেনের অর্থ ক্যাসিনো কারবারসহ অবৈধ উৎসর বলে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জিয়াদুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিএফআইইউর ধারণা, খালেদ তাঁর আয়ের বড় একটি অংশ মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচার করেছেন। কারণ তিনি এ দুই দেশে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। দেশ দুটিতে তাঁর কী পরিমাণ অর্থসম্পদ আছে, সেটি জানতে ওই দুই দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে বিএফআইইউ।

ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিজ বাসা থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন খালেদ। ২২ সেপ্টেম্বর খালেদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং পরিবারের সব ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করে বিএফআইইউ। এতে ৮০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং সেগুলোতে ৮০০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

জানা যায়, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দেখিয়ে ক্যাসিনোর ওই অবৈধ আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে আনেন খালেদ। প্রায় ৯ থেকে ১০টি ব্যাংকে খালেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ। এর মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংকেই ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতার আয়ের উৎস যথাযথভাবে যাচাই না করেই ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোও গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ বিষয়টিও যাচাই-বাছাই করে দেখছে বিএফআইইউ। খালেদ আসলে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করতেন কি না, সেটা যাচাইয়ের জন্য এরই মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। চিঠিতে খালেদের প্রতিষ্ঠান দুটি রাজউকের নিবন্ধন নিয়েছে কি না, তাঁর প্রতিষ্ঠানকে ভূমি ব্যবহার ও ইমারত নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে কি না, দেওয়া হলে কোন কোন এলাকায় কোন কোন প্রজেক্টে দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি তথ্য চাওয়া হয়েছে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি রোধে গ্রাহকের পরিচিতির সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্টধারী কী পরিমাণ লেনদেন করছেন, তাঁর আয়ের উৎস্য কী, ব্যবসার খাত কী এবং সেটা লেনদেনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না এসব বিষয় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মনিটর করতে বলা হয়েছে বিএফআইইউর নীতিমালায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীর ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনার বিষয়ে অতিরিক্ত নির্দেশনা পরিপালনের জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—হিসাবের প্রকৃত সুবিধাভোগী রাজনৈতিক ব্যক্তিই কি না, তা নির্ধারণের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি গ্রহণ, নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে গ্রাহক পরিচিতির অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ এবং হিসাব খোলার উদ্দেশ্য, হিসাবের অর্থ বা সম্পদের উৎস জানার জন্য অধিকতর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবার ও সদস্যদের ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনার ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু খালেদের অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে লেনদেন পরিচালনা—কোনো ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলো বিএফআইইউর এ নির্দেশনা মানেনি। এটা করলে হয়তো অনেক আগেই খালেদের অবৈধ আয়ের উৎস বের হতে আসত।

বিএফআইইউর প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, ‘এগুলো আমাদের নিয়মিত কাজ। এটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর গাফিলতি ও সহযোগিতা করার প্রমাণ মিললে মানি লন্ডারিং আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ক্যাসিনোর অবৈধ টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে নামসর্বস্ব দুটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খোলেন খালেদ, যেগুলোর প্রপ্রাইটর (মালিক) হিসেবেও তাঁর নাম রয়েছে। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন তাঁর ভাই মাসুদ মাহমুদ ভূঁইয়া। রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা এ দুই প্রতিষ্ঠানের হিসাবেই প্রতিদিন বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে। আবার এসব হিসাবে সব সময় নগদ লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ নগদ জমা ও নগদ উত্তোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল লেনদেন। বিএফআইইউর ধারণা, প্রতিদিন রাতে ক্যাসিনো থেকে খালেদের যে আয় আসত সেটা পরদিন ব্যাংকে জমা করা হতো। আবার নিয়মিত অর্থ উত্তোলনও হতো। যদিও এসব হিসাবে প্রতিদিন বড় অঙ্কের স্থিতি অলস পড়ে থাকত।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ওই দুটি রিয়েল এস্টেট হলো—মেসার্স অর্পণ প্রপার্টিস ও ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপার। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন ফরমে মেসার্স অর্পণ প্রপার্টিসের ঠিকানা দেওয়া আছে—১৯৫ উত্তর শাজাহানপুর। আর ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়ার ঠিকানা—প্লট-২৮, রোড-৩, ব্লক-ক, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, মোহাম্মদপুর। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই ঠিকানায় প্রতিষ্ঠান দুটির কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে ৬৪, ৬৬, ৬৭ ও ৬৮ উত্তর কমলাপুরের ইস্টার্ন কমলাপুর কমপ্লেক্সের লেভেল-৪-এ ভূঁইয়া গ্রুপ নামে খালেদের এক হাজার ২০০ স্কয়ার ফিটের চার রুমবিশিষ্ট একটি অফিস রয়েছে। যেখানে গ্রুপের সহযোগী হিসেবে নেমপ্লেটে চারটি প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া আছে। এর মধ্যে মেসার্স অর্পণ প্রপার্টিস ও ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারসের নামও রয়েছে। অপর দুটি প্রতিষ্ঠান হলো—অর্কো বিল্ডার্স ও এমএম বিল্ডার্স। ওই অফিসেই টর্চার সেলের সন্ধান পায় র‌্যাব। খালেদকে আটকের পর র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ওই অফিস বন্ধ করে দিয়েছে।

রাজউকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাজউকের নিবন্ধনের তালিকায় এ চারটি প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। আবার রিহ্যাবের সদস্য কি না সেই খোঁজ নিয়েও দেখা গেল, সেখানে তাদের নাম নেই। রাজধানীতে কোনো ইমারত নির্মাণ করতে হলে রাজউকের ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু খালেদের প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত কোনো বিল্ডিং নির্মাণ করেছে কি না, করলে কটি করেছে সেই তথ্য রাজউকের কেউই দিতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, একটি স্বনামধন্য রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান যদি বছরে দুটি বিল্ডিং নির্মাণ করে, তাহলে পাঁচ বছরে করবে ১০টি। প্রতিটি বিল্ডিং থেকে ওই রিয়েল এস্টেট ২০ কোটি টাকাও যদি আয় করে তাহলে ২০০ কোটি টাকার বেশি হবে না। কিন্তু খালেদ ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের হিসাবে মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরে ৮০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

এদিকে দেশে খালেদের কী পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে সেটিও অনুসন্ধান শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ পর্যন্ত বসুন্ধরা, মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার ও কাদেরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, উত্তর শাজাহানপুর, সবুজবাগের বাসাবো ও দক্ষিণ মাদারটেক, দক্ষিণ গোড়ান, কমলাপুর এবং মতিঝিল এলাকায় খালেদের বাড়ি ও ফ্ল্যাট থাকার কথা জানা গেছে। এসব সম্পত্তিও সরকার চাইলে আদালতের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0081171989440918