খুলনায় ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্রাণ হারালেন অবসরে যাওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া (৬৬)। তিনি বেনাপোলগামী ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে কাটা পড়েন। গত শনিবার সকালে খুলনা রেলস্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ড. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষক। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, ড. মিজানুর রহমানের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু দেশের রেলস্টেশনের ত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। অবশ্য রেলওয়ের ত্রুটিপূর্ণ প্ল্যাটফর্মের কারণে দুর্ঘটনার খবর নতুন নয়। দেশের বেশিরভাগ রেলস্টেশনেই ট্রেনের বগির পাটাতন প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক নিচুতে থাকে। এ কারণে ট্রেনে উঠতে ও নামতে যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। বিশেষ করে নারী-শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের ভোগান্তি হয় সবচেয়ে বেশি। লাগেজ থাকলে ট্রেনে ওঠানামার জন্য একপ্রকার যুদ্ধ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
দুঃখজনক হল, একের পর এক দুর্ঘটনার পরও ট্রেনের পাটাতনকে প্ল্যাটফর্মের সমউচ্চতায় আনার বিষয়ে কোনরকম উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনরকম মাথা ব্যথা নেই। যেন এটা একটি স্বাভাবিক বিষয়। রেলে চলতে গেলে যাত্রীদের এমন দুর্ভোগ পোহাতেই হবে। অথচ পৃথিবীর কোন দেশেই এমন উদ্ভট ব্যবস্থা চালু নেই। পাশের দেশ ভারতের প্রতিটি স্টেশনেই প্ল্যাটফর্ম আর রেলের পাটাতন একই উচ্চতায়।
রেলের অব্যবস্থাপনার সীমা নেই। ট্রেনের জানালার কাচ ভাঙা, জানালার শাটার ওঠানামা করে না। বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হলেও যাত্রীরা চলছেন। ওয়েটিং রুমগুলোতে দুর্গন্ধে বসার মতো পরিবেশ নেই। নেই পানি কিংবা বাতি। অথচ একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের কথা শোনা যাচ্ছে। প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাতের খবর পত্রপত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। এক্ষেত্রেও কোন স্বচ্ছতা নেই, কোন জবাবদিহিতা নেই। আমরা বলতে চাই, প্রকল্পের নাম করে যা চলছে তা যদি চলতেই থাকে এবং এর প্রতিকারের যদি কোন সদিচ্ছাই না থাকে তবে এমন আরেকটি প্রকল্পের নামে প্ল্যাটফর্মগুলোকে রেলের পাটাতনের সমউচ্চতায় আনা যেতে পারে। তাতে অন্তত যাত্রীদের মৃত্যুঝুঁকি কমবে।