শহীদ ড. জোহা দিবস আজ - দৈনিকশিক্ষা

শহীদ ড. জোহা দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ডোন্ট ফায়ার! আই সেইড, ডোন্ট ফারায়! কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন আমার গায়ে গুলি লাগে।’ পাকিস্তানি সেনাদের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে এমনই উচ্চারণ করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তৎকালীন প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা।

সময়টা তখন ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী চলছে গণঅভ্যুত্থান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও (রাবি) শুরু হয় আন্দোলন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারে দাবিতে ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে এদিন সকালে মিছিল বের করে রাবি শিক্ষার্থীরা। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে জড়ো হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে।

এসময় ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে একই স্থানে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করে পাকিস্তানি সেনারা। তুমুল উত্তেজনার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে উদ্ধত হয় সেনাবাহিনী। এসময় ছুটে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা। শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ডোন্ট ফায়ার! কোন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন আমার বুকে গুলি লাগে।

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার শর্তে পাকিস্তানী সেনাদের গুলি করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তাঁর কথায় কর্ণপাত করে না বর্বর সেনারা। হঠাৎ পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন ক্যাপ্টেন হাদী। গুলিবিদ্ধ ড. জোহাকে তারা রাজশাহী মিউনিসিপল অফিসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাঁকে। শহীদ হন ড. জোহা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে তাঁর নামে জোহা চত্ত্বর। প্রশাসন ভবনের সামনে এই জোহা চত্ত্বরে সমাহিত করা হয় তাঁকে। কালের স্বাক্ষী হয়ে শায়িত আছেন তিনি।

ড. শামসুজ্জোহা পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বাকুড়া জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ক্রিশ্চান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

৬৯ এর পর থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ জোহা দিবস ও একইসাথে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তাঁর সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক প্রদানসহ নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করে আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। ড. জোহাকে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাঁর এই আত্মত্যাগ পরবর্তী সকল আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। সেই অনুপ্রেরণা দেশব্যাপী আন্দোলনের বুনিয়াদ হয়ে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিলো স্বৈরাচারী আইয়ুব খানকে। দেশবাসীকে তাঁর প্রতি ঋণী করেছেন।

আর শিক্ষকদের কাছে আদর্শ হয়ে আছেন। তাই প্রতিবছর এই দিনটি শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও আজ ৪৯ বছর যাবত দিবসটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য দাবি করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় উপ উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, এই দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি রাখে। ১৮ ফেব্রুয়ারির এই দিনে ড. শামসুজ্জোহা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে যে আত্মত্যাগ করেছেন ইতিহাসের পাতায় তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি শিক্ষকদের আদর্শ হয়ে এবং শিক্ষার্থীদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আমজাদ হোসেন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, এ দিবসটিকে সরকারিভাবে গতবার এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতি থেকে জাতীয় পর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। ফেডারেশন থেকে মিটিং ডাকা হলে আমি আবার এ বিষয়টি তুলে ধরবো। আমার প্রত্যাশা এই দিবসটিকে অবশ্যই জাতীয়করণ করা হোক।

পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে তাঁর নামে নামকরণ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিফলক। ড. জোহার স্মরণে এই দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে দেশব্যাপী পালন করা হবে এই প্রত্যাশা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

 

 

 

 
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069019794464111