তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর জ্ঞানসম্পন্ন স্কুল শিক্ষকদের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যারা পরবর্তীকালে যেকোনো নির্বাচন এলেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের যন্ত্রটি পরিচালনা শেখাবেন।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সব নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে নির্বাচন কমিশন। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ৫১৯টি উপজেলা/থানা কার্যালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষকদের বাছাই করা হয়েছে। আলোচনার ভিত্তিতে প্রতি উপজেলা/থানা থেকে ১০ জন আইটি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষকের তালিকা করেছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৫ জুন সারাদেশের পাঁচ হাজার ১৯০ জন শিক্ষককে তাদের কর্মস্থলে ইভিএমের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে নির্বাচন কমিশন।
অনলাইনে জুম অ্যাপ ব্যবহার করে দেওয়া হবে এই প্রশিক্ষণ। এতে প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন ইসির ৪৫ জন কর্মকর্তা। ৪৫ প্রশিক্ষককে ইতোমধ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে প্রশিক্ষক তৈরি করতে যথেষ্ট সময় হাতে থাকে না। তাই আইটি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষকদের এখনই প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা হচ্ছে। এরাই নির্বাচনের সময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন। উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় আইটি সহায়তা সরবরাহ করবেন।
তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণে তেমন ব্যয় হচ্ছে না। ইসির ৪৫ জন প্রশিক্ষক ১ হাজার করে টাকা ভাতা পাবেন। আর শিক্ষকদের জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাতা ও ১৬০ টাকা ইন্টারনেট বিল দেওয়া হবে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, সামনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন, চারটি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সাধারণ নির্বাচন ও উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এসব নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ইতোমধ্যে সব নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেই আলোকেই বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে এই ভোটযন্ত্রটি তৈরি করে নিয়েছে সংস্থাটি।
দেশে ইভিএমের মাধ্যমে ২০১০ সালে ভোটগ্রহণের প্রচলন শুরু করেন এক-এগার সরকারের সময়কার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খুব অল্প দামে মেশিনগুলো তৈরি করে নেয় ইসি। কিন্তু ২০১৫ সালে এসে সেই ইভিএম মেশিনে ত্রুটি ধরা পড়ে। যে কারণে ইভিএমগুলো নষ্ট করে আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন। সেই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় বর্তমান কমিশন দুই লাখ টাকার ইভিএম তৈরি করে নিয়েছে।
বর্তমানে ব্যবহৃত ইভিএমে কয়েক ধাপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাইরে থেকে কোনো ডিভাইস যুক্ত করার উপায় রাখা হয়নি। নেই কোনো ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থাও। কাজেই এই যন্ত্র হ্যাক করার কোনো উপায় নেই বলে নিশ্চয়তা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।