জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে অন্য শিক্ষকদের কোন্দলে বিভাগের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ঠিকমতো অনলাইনে কোনো ক্লাস হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষকদের মধ্যকার এই রেষারেষির কারণে ইউজিসির সীদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের নিয়মিত ক্লাস চললেও বন্ধ রয়েছে এই বিভাগের অনলাইন ক্লাস। ক্লাস না হওয়ায় সেশনজট নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আগের মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে বিভাগের অর্থনৈতিক কাজে অনিয়ম, একাডেমিক কমিটির সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করা, অন্য শিক্ষকদের হয়রানি, পক্ষপাতিত্ব আচরণ করা, ব্যাংক থেকে বিভাগীয় ল্যাবরেটরি, সেমিনারসহ নানা কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূতভাবে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন, পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজে নিয়মবহির্ভূত পন্থা অবলম্বনসহ নানা অভিযোগ এনে তার তত্ত্বাবধানে কাজ করতে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন বিভাগের ১৪ জন শিক্ষক। এরপর গত ২৫ আগস্ট বর্তমান চেয়ারম্যানসহ আরো ছয় জন শিক্ষক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মল্লিক আকরামের বিরুদ্ধে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মসহ মোট ২৬টি পালটা অভিযোগ এনে উপাচার্যের কাছে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে ক্লাস রীতিমতো চললেও আমাদের দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন ক্লাস বন্ধ আছে। যেখানে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক সেমিস্টার শেষ করে অন্য সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করে দিয়েছেন অনেক আগেই, সেখানে আমরা কোনো কোর্সেরই এখনো আগের সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করতে পারিনি। এতে করে আমরা অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি। বিভাগের শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ থাকবে, দ্রুতই যেন নিজেদের মধ্যকার কোন্দল মিটিয়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে আবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’ এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ক্লাস হচ্ছে। নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়নি এখনো। ল্যাবের ক্লাস না হওয়ায় আমাদের গত সেমিস্টার শেষ হয়নি।’
এ বিষয়ে বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মল্লিক আকরাম হোসেন বলেন, ‘বিভাগের ক্লাস হচ্ছে, কিন্তু রুটিন অনুযায়ী হচ্ছে না। আমরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। দীর্ঘদিন ধরে ওনার স্বেচ্ছাচারিতায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ।’ ক্লাস বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ক্লাসগুলো শেষ করেছি। তবে অন্য কোনো শিক্ষক ক্লাস বন্ধ রেখেছেন কি না, এ বিষয়ে জানি না।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ক্লাস হচ্ছে না, তা জানতাম না। এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনিই তো এ বিষয়ে সমন্বয় করার কথা। তার পরও আমরা বিষয়টা দেখব।’