মাসিক পরীক্ষার নামে রশিদ ছাড়া টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা, ক্লাসে অনুপস্থিতির অজুহাতে জোর করে টাকা আদায়, প্রাইভেট না পড়ার কারণে পরীক্ষায় ফেল করে দেয়া, ব্যক্তিগত কোচিংয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে বাধ্যকরাসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদরাসার তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
ওই তিন শিক্ষক হলেন, আরবি ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক জি এম শামছুল আলম, একই বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আব্দুল জলিল ও প্রভাষক হোসনে ফেরদৌস। তিন শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভও করে শিক্ষার্থীরা।
সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদরাসার উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রথমত আলিম ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে মাসিক পরীক্ষার নাম করে প্রতি জনের থেকে ২০০ টাকা হারে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে ওই তিন শিক্ষক।
মাসিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় প্রতি জনের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করেছে। ক্লাসে অনুপস্থিতির অযুহাতেও শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে জোর করে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করেছে। ওই তিন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারণে নিজ নিজ বিষয়ের পরীক্ষায় ফেল করে দেয়ার অভিযোগও আছে।
সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে প্রতিজনের কাছে অনেকটা জিম্মি করে ১ হাজার টাকা করে আদায় করেছে। নির্বাচনী পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা ফি বাবদ ৪০ টাকা হারে উত্তোলন করার পড়েও অতিরিক্তি আরো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের কোচিংয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর অভিযোগও রয়েছে ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
সাবেক একজন অধ্যক্ষের বিদায় অনুষ্ঠানের বার্ষিক ভোজনেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে মর্মে উল্লেখ আছে ওই অভিযোগপত্রে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও কল্যাণ শাখায় দাখিল করা অপর আরেকটি অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন যে, ওই তিন শিক্ষকের এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন শিক্ষার্থী কথা বললে, তাদের আশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে। ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থী আরো উল্লেখ করেছে যে, তাদের থেকে বিভিন্ন অজুহাতে উত্তোলন করা টাকার রশিদ চাইলে ওই সব শিক্ষকরা বলে তোমাদের মত ছাত্রের জন্য মাদরাসায় আসতে ইচ্ছে করে না। ২০১৯ সালের আলিম পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ওই সব শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদের হুমকি দিয়ে ওই শিক্ষকরা বলেছেন তোমরা কি করে ভালো রেজাল্ট করো সেটা দেখে নেবো।
এসব বিষয়ে সরকারি মুস্তাফাবিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম, আব্দুল মোমিন, শাওনা, রনি এবং রাকিব জানান, ওই তিন শিক্ষাক মাদরাসায় আসার পর থেকেই আমাদের বিভিন্ন সময় জিম্মি করে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করেছে। এখনো করে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ এবং হুমকি দিয়ে থাকেন। এবিষয়ে আরবি ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক জি এম শামছুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মাদরাসায় আসার পর নির্বাচনী পরীক্ষাগুলোতে নকল বন্ধ করেছি।
এজন্য কিছু শিক্ষকের ইন্ধনে শিক্ষার্থীরা তাদের নামে ভুয়া অভিযোগ করেছেন। আমরা মাদরাসায় কোন ধরনের কোচিং চালাই না। শিক্ষার্থীদের থেকে রশিদ ছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অধ্যক্ষের অনুমোতি ছাড়া কোন টাকা উত্তোলন করিনি।
এপ্রসঙ্গে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান প্রথমে বলেন তিনি এসব বিষয়ে কিছু জানেন না। অথচ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ বরাবরেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেছে। পরে তিনি বলেন, অভিযোগ এখনো তদন্ত হয়নি। ওই শিক্ষকরা এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা তিনি জানেন না।