সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার প্রতি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। অথচ যে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞানের আলো জ্বালানো হয় তা কতটুকু পরিষ্কার তা ভাবা বিশেষ দরকার। বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলোর অবস্থা অনেক করুণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে।
যে প্রতিষ্ঠানগুলো হতে দেশের সুস্থ ও সচেতন নাগরিক হওয়ার জন্য শিক্ষা দেয়া হয় সে জায়গা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হয় তাহলে কেমন করে সুস্থ ও সচেতন নাগরিক তৈরি হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব শুধুমাত্র একজন পরিষ্কারকারী কর্মীর কাজ নয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সবার দায়িত্ব। উন্নত দেশগুলোতে বাচ্চারা এই সাধারণ জ্ঞানগুলো পরিবার থেকে পেয়ে থাকে।
তাহলে আমাদের দেশের বাচ্চারা কেন পরিবার থেকে এই জ্ঞানগুলো পায় না। আমি বলছি না বাংলাদেশ ইউরোপ হয়ে গেছে তবে আমরা তো পিছনে নেই অর্থনৈতিক ও টেকনোলজির দিক দিয়ে। আমাদের যে অগ্রগতি তা অতুলনীয়। আজ শহর হতে শুরু করে গ্রামের প্রতিটা মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। দেশ ও দেশের বাইরের ভালো-মন্দ খবর রাখে, তাহলে আমরা কেন আমাদের জায়গা পরিষ্কার রাখতে পারি না।
শিক্ষামন্ত্রী কিছুদিন আগে যে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তা যুগান্তকারী ঘোষণা। সপ্তাহে একদিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে বিদ্যালয় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করবে। শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর কিছু স্কুল-কলেজ কাজগুলো করতে শুরু করেছিল। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এর বাস্তবায়ন এখন আর নেই। তাহলে এই ব্যর্থতা শিক্ষকের নাকি শিক্ষার্থীদের নাকি অন্য কারোর। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের কাজের প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হবে এবং বলা যায় পরিবেশের দিক দিয়েও তাদের মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে যার ফল দেখতে পাবো।
আমি গতবার বাংলাদেশে যাওয়ার পর দেখি ঢাকার রাস্তার দুই পাশে ডাস্টবিন বসানো আছে। সেই ডাস্টবিনগুলো খুব শক্ত লোহা দিয়ে তৈরি করা। খুব সুন্দর রঙের ডাস্টবিন। এই মহত্ কাজের জন্য ঢাকার দুই মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই। তবে মজার ব্যাপার হলো আমি বাদাম খেয়ে যখন ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে গিয়েছি দেখি পুরোটা খালি। ডাস্টবিনের পাশে পড়ে আছে ময়লা আর ময়লা।
আর দেখলাম কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হলো এই ময়লাগুলো কি ঢাকার দুই মেয়র করেছে নাকি আমাদের মত সাধারণ পথচারী মানুষগুলো করেছে। পরিবেশকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমাদের সবাইকে সরকার ও সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করতে হবে।
যে মানুষগুলো দেশে অনিয়ম করে থাকে সেই মানুষগুলোই কিন্তু বিদেশে আসলে ট্রাফিক আইন এবং ময়লা আবর্জনার জন্য ডাস্টবিন ব্যবহার এবং অন্য নিয়মগুলো পালন করে থাকে। তাহলে আমাদের নিজের দেশে কেন হবে না বা কেন করি না। কারণ, আইন আছে কিন্তু আইন মানতে রাজি নই।
নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা না ফেলার কারণ হলো নীতিবাচক শিক্ষার অভাব ও পরিবেশগত শিক্ষার অভাব। দরিদ্রতা পরিবেশ নষ্টের জন্য অনেকাংশের দায়ী। পরিবেশ সুন্দর রাখতে জনগণকে সচেতন করতে হবে। এই সমস্যার সমাধান থেকে বের হওয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাইরের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর করার জন্য ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে পরিবেশগত শিক্ষা দিতে হবে এবং এটি সম্পর্কে প্রচার করতে হবে।
ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যদি কেউ না করে তাহলে জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। জরিমানা ঘোষণা দিলেই হবে না শক্ত হাতে কার্যকর করতে হবে। স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির পরিবেশকে আরো উন্নত করতে জনগণকে মানবিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
লেখক: পিএইচডি ক্যান্ডিডেট অ্যান্ড টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইনস্টিটিউট অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারক্লো, পোল্যান্ড
সূত্র: ইত্তেফাক