শিক্ষককে বলা হয় সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ার। আজ সেই শিক্ষকদের অসহায়ত্ব ও অধিকারের প্রশ্ন, লজ্জিত ও অপমানিত হওয়ার গল্প সভ্য সমাজে বড় বেমানান। কিন্তু বাস্তবতা আজ ভিন্ন।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- যুগে যুগে অতি অত্যাচারী শাসকও নত শিরে গুরুর সামনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই সমাজের শিক্ষা অনেকটা বৈচিত্র্যপূর্ণ ও হতাশার।
অতীত থেকেই শিক্ষকরা আর্থিক দীনতার কবলে থাকলেও সমাজ বা রাষ্ট্র কখনও শিক্ষকের স্বাধীনতা, মর্যাদা বা সম্মানের জায়গা কেড়ে নেয়নি। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার উন্নতি ঘটাতে ম্যানেজিং কমিটি গঠন হলেও কতিপয় লোভী, স্বেচ্ছাচারী, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী স্থানীয় সুবিধাভোগী নব্য হায়েনারা শিক্ষার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ম্যানেজিং কমিটির ভূমিকা। তা না হলে পিতৃতুল্য শিক্ষককে কেন রাস্তায় নাজেহাল হতে হবে? কেন মায়ের জাত শিক্ষিকাকে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাতে হবে? কেন কান ধরে উঠবস করবে নিরপরাধ শিক্ষক?
সব কিছুর মূলে অনধিকার চর্চা ও সুবিধা না পাওয়ার আক্ষেপ। কতিপয় অসৎ শিক্ষকের সান্নিধ্যে ম্যানেজিং কমিটির অনেককে দেখা যায় পদ পদবি বছরের পর বছর আঁকড়ে ধরে আছে। কিন্তু এই কতিপয় অসৎ শিক্ষক সারা দুনিয়ার শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করে কি?
সরকার শতভাগ বেতন ভাতা দিয়ে শিক্ষা ও শিক্ষককে এগিয়ে নিতে চাইলেও ম্যানেজিং কমিটির অপরাজনীতি আজ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কি না সরকারকে ভাবতে হবে।
সব স্থান বা সদস্যের ভূমিকা একই রকম তা বলা যাবে না। কিন্তু স্থানীয় নেতৃত্বের প্রভাব ও দলীয় কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। অস্বীকার করার সুযোগ নেই এ থেকে উত্তরণে সরকারকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে সভাপতি ও সদস্য হওয়া না হওয়া কিংবা একাধিকবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা এসবই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অন্তরায়।
সেবা বা গুরু দায়িত্ব না ভেবে কতিপয় অসৎ নেতৃত্ব ক্ষমতার চর্চা হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব গড়ে। যা মোটেও কাম্য নয়। তাই মহামান্য হাইকোর্ট যর্থাথই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন দুইবারের অধিক সভাপতি বা সদস্য থাকা যর্থাথ নয়। তাই জাতি আশা করে অচিরেই এই পর্যবেক্ষণ পরিপত্রে রূপ নেবে; তথা শিক্ষা ও শিক্ষকের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুক্তি মিলবে।
লেখক : শাহআলম সরকার, সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান), বাংগালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]