শিক্ষা বাজেট বাড়ানোর ‘রূপপুর পদ্ধতি’ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা বাজেট বাড়ানোর ‘রূপপুর পদ্ধতি’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রস্তাবিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ এবার সর্বোচ্চ। তবে এ জন্য কৃতিত্ব পাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সরকারের এই ‘মেগা’ প্রকল্প এবার শিক্ষা খাতের বরাদ্দ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এভাবে ঢুকে যাওয়ার পেছনের কারণটি হলো, বাজেটে শিক্ষা খাতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি খাত। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ খাত। আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ ১৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। আর এতেই শিক্ষা খাত নতুন বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দের স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। সোমবার (২৪ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন জাহাঙ্গীর শাহ।

উন্নয়ন বাজেটে এর আগে শিক্ষা ও ধর্ম একসঙ্গে যুক্ত ছিল। আর বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ছিল আলাদা খাত হিসেবে। কিন্তু মোট বাজেট বরাদ্দের দিক থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিভাগকে এক করে দেওয়া হয়েছে। কেবল শিক্ষা ও ধর্ম খাত হিসেবে বরাদ্দ ধরলে মোট বাজেট দাঁড়ায় ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এর বাইরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। সব একসঙ্গে ধরে এখন সরকার বলছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার পরিমাণ ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন এ বিষয়ে বলেন, হিসাবটি কীভাবে দেখানো হচ্ছে, সেটা না দেখে মন্তব্য করা যাবে না। তবে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষাসংক্রান্ত কাজ হয়। যেমন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্যাডেট কলেজগুলো চলে। ফলে অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর শিক্ষাসংক্রান্ত খরচ যোগ করলে শিক্ষা খাতে আরও বেশি খরচ হয়।

শিক্ষাবিদ ও উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, শিক্ষা খাতে চাহিদামতো বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। আর পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা যাচ্ছে না। দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে শিক্ষার বরাদ্দ ২ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছে। এই বরাদ্দ জিডিপির ৬ শতাংশ করাটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে মানা হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ১শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে কেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ ঢোকানো হলো, তা বুঝলাম না। এটি তো বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এই প্রকল্প বিদ্যুৎ খাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। এভাবে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ দিয়ে অযথা শিক্ষা খাতের বরাদ্দে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

কোথায় কত বরাদ্দ

২০১৬ সালে শুরু হওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের সম্ভাব্য মোট ব্যয় ধরা আছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এই মেগা প্রকল্প টাকার অঙ্কে দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প। ইতিমধ্যে প্রথম তিন বছরে এই প্রকল্পে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আবার রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য পরিবহনের জন্য রেলপথ সংস্কার ও নির্মাণ নামে আরেকটি প্রকল্প চলমান আছে। এই প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে ১৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা-ও শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের খরচে ঢুকে গেছে।

শুধু রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়; শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন প্রকল্পও আছে এই খাতে। আর তাতে রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বরাদ্দ। এই তালিকায় আছে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রেললাইন নির্মাণ, হাইপো থাইরয়েড রোগের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত করা, জাতীয় জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ইত্যাদি। এমনকি শিক্ষা ও প্রযুক্তি নামের খাতে ঢুকে গেছে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রকল্পও। যেমন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কালিয়াকৈর, সিলেট ও রাজশাহীতে হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য তিনটি পৃথক প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে মোট ২৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) দলিল অনুযায়ী আগামী বছর মিলিয়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৮৪টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের ৪৬টি প্রকল্প।

শিক্ষা খাত শীর্ষে নয়

প্রযুক্তি খাত বাদ দিলে বরাদ্দপ্রাপ্তিতে বাজেটে শিক্ষা খাত শীর্ষ স্থানে থাকছে না। আগামী অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় মিলিয়ে মোট বরাদ্দ ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। আর প্রযুক্তি খাত বাদ দিলে শুধু শিক্ষা খাতের ব্যয় দাঁড়ায় ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, যা বাজেটের সাড়ে ১১ শতাংশের মতো। এতে দ্বিতীয় স্থানে নেমে যায় শিক্ষা খাত। আর ৬৪ হাজার ৮২০ কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে শীর্ষে উঠে যায় পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।

প্রযুক্তি খাত বাদ দিলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ তেমন বাড়েনি। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে জিডিপিতে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ দাঁড়ায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ। আর প্রযুক্তি বাদ দিলে তা নেমে আসে ২ দশমিক ১১ শতাংশে। চলতি অর্থবছরে তা ২ দশমিক ০৫ শতাংশ। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৫ দেশের মধ্যে শিক্ষা খাতে খরচের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ নিয়ে বলেন, ‘শিক্ষাকে আমরা বাজেটে বিনিয়োগের অঞ্চল হিসেবে দেখছি না। “ডাকার ঘোষণা” অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ না দিলে জিডিপি অনুপাতে এর অংশ ৬ শতাংশে পৌঁছাবে না। আমরা এর ধারেকাছেও নেই। শিক্ষায় ১ টাকা বিনিয়োগ করলে ১০ টাকা ফেরত আসে। সুতরাং শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করলে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুর মতো কারিগরি প্রযুক্তি আমরাই তৈরি করতে পারব। অথচ শিক্ষার মানের দৈন্যদশার কারণেই প্রতিবছর ৫০০-৬০০ কোটি ডলার বিদেশিরা নিয়ে যাচ্ছে।’

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075230598449707