শিক্ষার বিষয়টা শুধু পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কিংবা সার্টিফিকেট অর্জন করা নয়। শেখার মধ্য দিয়ে কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা, যেকোনো সমস্যাকে মোকাবিলা করা ও গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা অর্জন, মানবিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম—সবকিছুই শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।
এমনকি কমিউনিকেশন স্কিলের মতো বিভিন্ন সফট স্কিল ও হার্ড স্কিলও শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ এই বিষয়গুলো অর্জনের চেয়ে আমরা এখনকার প্রেক্ষাপটে দেখছি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা কেবল জিপিএ-৫ নিয়েই মাথা ঘামাচ্ছেন। পুঁথিগত পড়াশোনা ছাড়াও সামগ্রিক জ্ঞান অর্জন করার শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে না।
আর প্রচলিত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক জ্ঞানের বাইরে অন্যান্য জ্ঞান মূল্যায়নের সুযোগ কম। তাই আমরা এই বিষয়টিতে জোর দিয়ে ধীরে ধীরে মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনছি। এছাড়া নিত্যনতুন বিভিন্ন আয়োজন, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সহশিক্ষা কার্যক্রমেও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যেটি তাদের জ্ঞানকে পরিশীলিত করছে।
আগেকার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে এখনকার প্রেক্ষাপট তুলনা করে অনেকে বলেন, আমাদের সময় শিক্ষকদের সবাই অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রিধারী ছিলেন না, কিন্তু বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই তাঁদের অসাধারণ দখল ছিল। আবার এখন অনেক শিক্ষক মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েও যথেষ্ট দখল রাখতে পারছেন না।
আগে যাঁরা শিক্ষকতায় আসত, তাঁরা শিক্ষকতাকে মহান ব্রত ভাবত। অথচ অনেকে এখন শিক্ষকতাকে স্রেফ অন্য পাঁচটা চাকরির মতো ভাবে। আগেকার শিক্ষার্থীদের পড়ার ধরনের সঙ্গে এখনকার শিক্ষার্থীদের পার্থক্য অনেক। শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া সহজ কোনো উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।
কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে এখন আগের মতো ভর্তিযুদ্ধ নেই। যেহেতু পুরো বিষয়টা অনলাইনে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তাই একজন শিক্ষার্থী চাইলেই যেকোনো কলেজে ভর্তি হতে পারে না, তাকে বেশকিছু অপশন মাথায় রাখতে হয়। তবে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি ঝোঁক সবসময়ই লক্ষ করা যায়।
মনে রাখা দরকার, সচরাচর যেগুলোকে ভালো প্রতিষ্ঠান বলা হয়, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিয়মশৃঙ্খলা, পাঠদানে ভিন্নতা ও ভালো ফলাফলের কারণে সুনাম অর্জন করেছে বলেই সেগুলোকে আমরা ভালো বলছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, একজন শিক্ষার্থী যদি পরিশ্রমী হয়, আন্তরিকতার সঙ্গে পড়াশোনা করে, তবে তার পক্ষে যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই ভালো করা সম্ভব।
প্রতিবছরই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়াসহ নানাবিধ সাফল্যের কথা শুনতে পাই আমরা। কাজেই জিপিএ-৫ এবং ভালো প্রতিষ্ঠানের নামের পেছনে না ছুটে আমাদেরকে লক্ষ্য স্থির করে প্রকৃত শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনে মনোযোগ দিতে হবে। মানবসম্পদ ও মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে গড়ে ওঠার যাত্রায় ফলাফল ও প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়ে জেতার চেয়ে শেখাটা অনেক বেশি জরুরি।
সূত্র: ইত্তেফাক