বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন দাবি করেছেন, ‘৩০ লাখ নয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মারা গেছে ৩ লাখ মানুষ।’ এ নিয়ে রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধরা ক্ষোভ প্রকাশ এবং সচিবকে নি:শর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছেন। বোর্ড থেকে মোয়াজ্জেমকে ফের কলেজে পাঠিয়ে দেয়ারও দাবি করেছেন তাঁরা।
জানা যায়, মোয়াজ্জেম হোসেন একটি সরকারি কলেজের ইতিহাসে শিক্ষক পদে ছিলেন। গত বছর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদে প্রেষণে যোগ দেন। গত ১৭ মার্চ মুজিব বর্ষের আলাচনায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে উল্টোপাল্টা বলার পর গতকাল ২৪ মার্চ মোয়াজ্জেমের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক। ডিসির চিঠির কপি বিকেলেই বোর্ড অফিসে পৌঁছেছে। মোয়াজ্জেমের শাস্তি দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। ক্ষোভে ফুঁসছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে মোয়াজ্জেম হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করছেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
জানা গেছে, ১৭ মার্চ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মুজিববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। বক্তৃতাকালে সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, একাত্তরে মানুষ মারা গেছে ৩ লাখ। একটা শূন্য বেশি করে বলা হয় ৩০ লাখ। তার এই বক্তৃতার পর চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয় বোর্ডে। সবাই নিন্দা জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমান। তিনি জানান, বোর্ড সচিব তার বক্তব্যে নিজেকে একজন ইতিহাসের শিক্ষক উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আমরা সব সময়ই বাড়িয়ে বলি। যেমন- একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা। সংখ্যাটা ৩ লাখ হয়তো হবে। কিন্তু আমরা একটা শূন্য বাড়িয়ে বলি ৩০ লাখ।
সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম, রাজশাহীর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি ওই কর্মকর্তাকে অবিলম্বে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। তা না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। এদিকে আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ ও বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ চাই নামে ২টি সংগঠনও ওই কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সচিবের শহীদের সংখ্যা নিয়ে এমন বক্তব্যে ব্যাখ্যা চান জেলা প্রশাসক। বিভিন্ন সংগঠন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সচিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের দাবি জানায়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক সচিবের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠান।
চিঠিতে বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে আপনি মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করেছেন মর্মে ১৯ মার্চ দৈনিক ভোরের কাগজ ও দৈনিক লাল গোলাপ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে আপনার মতামত জানাতে বলা হলো।’
এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার পরিচালক ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষা ক্যাডারের প্রগতিশীল কর্মকর্তারা। মিছিল করে ছাত্রলীগ। ওএসডি করা হয় জাহাঙ্গীরকে। জাহাঙ্গীর দাবি করেন তিনিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
আরও পড়ুন:
খালেদার সাথে গোপন বৈঠক : সেই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাও শিক্ষা ভবনে
রিমান্ডে থাকা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার পক্ষে শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তাদের যত তৎপরতা