আমরা জানি, কোনো জিনিসের ভিত্তি মজবুত না হলে তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিমূল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তি কি মজবুত? এর উত্তর হবে ‘না’। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হওয়ার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা পায় না। যার ফলে আমরা দেখতে পাই যে মাধ্যমিক পর্যায়ে অনেকে ঝরে পড়ে। আবার প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ে দুর্বলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ১০-১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারে। যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তির দুর্বলতাকে প্রকাশ করে।
যদি শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিই শক্ত হবে তাহলে কেন শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়বে? কেনই বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের মাত্র ১০-১৫% শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হবে? এর পিছনে কারণ কী? আমরা এর পিছনে বেশ কিছু কারণ দেখতে পাই—যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অব্যবস্থাপনা, শিক্ষকের অভাব, দক্ষ শিক্ষকের অভাব। আমরা দেখতে পাই যে আমাদের দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষার ভিত্তি নষ্ট হচ্ছে এবং বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা পর্ষদে আসীন হচ্ছে কতিপয় প্রভাবশালী ন্যূনতম শিক্ষিত মানুষ যার ফলে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান উন্নয়ন হয় না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষকের অভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি এখনো নড়বড়ে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেশের মেধাবীরা শিক্ষক হিসেবে যোগদান করছেন না। এর পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে—যেমন বেতনভাতা, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব ইত্যাদি। এ কারণে শিক্ষার্থীরা ভালো মানের শিক্ষা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তাই সরকারের এখনই সচেতন হওয়া উচিত—মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যোগদান করতে উত্সাহিত হয় এজন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষিত ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য যুগপোযোগী শিক্ষাপ্রদানের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
একটি দালান দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য ভিত্তি জরুরি, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এর ভিত্তিমূল প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দিকে নজর দিতে হবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভালো হলে বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে এবং দেশকে নিয়ে যাবে উন্নয়নের মহাসোপানে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়