বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষা যত মানসম্মত হবে, আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে তত বেশি। মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমেই একজন মানুষ উন্নয়নের যথার্থ কারিগর হয়ে দাঁড়ায়। আমরা উন্নয়ন প্রয়াসী একটি স্বল্পোন্নত দেশ। দেশ ও সরকার উন্নয়ন চায়। কারণ, উন্নয়নই আমাদের দারিদ্র্যমুক্তির মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে পারে। শনিবার (১ জুন) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন মো. মইনুল ইসলাম।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে চাই উৎপাদন। পণ্য ও সেবা খাতে উৎপাদনের জন্য চাই কলকারখানা স্থাপন, কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি, ভৌতিক অবকাঠামো (যেমন- রাস্তাঘাট, রাজপথ, রেলপথ, নৌপথ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ), সামাজিক অবকাঠামো (যেমন- শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা)।
এরকম হরেকরকম খাতে আমাদের উৎপাদন কর্মকাণ্ড আধুনিক ও গতিশীল করতে হবে। এ জন্য চাই শিক্ষা তথা জ্ঞান। শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রয়োগের ফলেই উৎপাদন আধুনিক ও গতিশীল হয়ে ওঠে এবং বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। এ পথেই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো আজ উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়েছে।
তারাই আমাদের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল বা অনুকরণীয় আদর্শ। তাদের পথ ধরেই আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত দেশ গড়ার পথে এগিয়ে চলেছি। আর এ উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি মানুষ এবং সেই মানুষ হতে হবে শিক্ষিত ও জ্ঞানসম্পন্ন। আমাদের দেশে সংখ্যায় মানুষের অভাব নেই। কিন্তু মানবসম্পদে আমরা বেজায় গরিব। সেই সংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করে শিক্ষা। আর এখানেই শিক্ষার ক্রান্তিকালীন ভূমিকা।
শিক্ষার গুরুত্বের কথা আমাদের রাষ্ট্রনায়করাও স্বীকার করেন। প্রশ্ন হল, শিক্ষার কাম্য উন্নয়ন হচ্ছে না কেন? সমস্যাটি কোথায় এবং সমাধানের উপায় কী? বিষয়টি বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। এ বিষয়ে আলোচনায় বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা চলে আসে। বলা হয় শিক্ষায় সরকারি বাজেট বেজায় কম। জাতিসংঘের মতে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ ব্যয় করা উচিত। অথচ বাংলাদেশে এ হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এটা যে বেশ কম তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এক লাফে তা ৪ শতাংশে উন্নীত করতে না পারলেও একে অবিলম্বে ৩ শতাংশে উন্নীত করা দরকার এবং এ হার ক্রমাগত বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকা দরকার। আর শুধু বাজেট বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, দেখতে হবে শিক্ষার হারের পাশাপাশি মান বাড়ছে কিনা। শুধু পাসের হার এবং সার্টিফিকেটধারীর সংখ্যা বাড়ালেই শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে বলা যাবে না। সার্টিফিকেটধারীদের সংখ্যা বাড়া এবং মানসম্মত শিক্ষিতের সংখ্যা বৃদ্ধি এক কথা নয়।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে গিয়ে আমি স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া বেশকিছু শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার মান দেখে হতাশ হয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছি আজ প্রায় সাড়ে ১৫ বছর আগে। তবে এখনও আমি দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিতে বা শিক্ষক নিয়োগের কাজে যাই। তাদের কারও কারও উত্তর বা বক্তব্য শুনে হতাশ হই। অনেক চিন্তাভাবনা করে এবং কয়েকজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, শিক্ষায় এ ধসের বড় কারণ হল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মান খুবই দুর্বল। কয়েক মাস আগে এক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে দেখেছিলাম, উন্নত দেশে সাড়ে ছয় বছরে একটি শিশু যা শেখে, আমাদের দেশের শিশুরা তা শেখে ১১ বছর বয়সে। এত গেল প্রাথমিকের কথা। মাধ্যমিকে অবস্থা আরও শোচনীয়। বিশেষ করে মাধ্যমিকে যখন ভাষা ও গণিতের ভিত্তিটা গড়ে ওঠে, তখন এখানে তেমন কোনো শিক্ষাদান করা হয় না। এর সর্বপ্রধান কারণ উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব। বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের শিক্ষকের নিদারুণ অভাব আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার এ বেহাল দশার বড় কারণ। এসএসসি পাস দু-একজন ছাত্রকে বাংলায় দশ লাইনের একটি চিঠি বা টীকা লিখতে দিলে শুদ্ধ বাংলায় এবং নির্ভুল বানানে দশজনের মধ্যে দু’জন লিখতে পারে কি না সন্দেহ আছে। তারপর আসা যাক ইংরেজি প্রসঙ্গে। পরীক্ষা নিলে দেখা যাবে, দশজনের মধ্যে বড়জোর একজন ইংরেজি দেখে পড়তে সক্ষম।
আমার উপজেলায় দু-তিনটি মাধ্যমিক স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে দেখেছি, ইংরেজিতে তাদের ন্যূনতম জ্ঞানও নেই। ‘ইংরেজি লাগবে না, সবকিছু মাতৃভাষায় শিক্ষাদান করতে হবে’- এ রব তুলে দেশের শিক্ষার বেশ ক্ষতি করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। ইংরেজি যদি এতই অপ্রয়োজনীয় হয়, তাহলে এসএসসি, এইচএসসি, বিএ, বিবিএ, বিএসসি, এমবিবিএস, এলএলবি ইত্যাদি সার্টিফিকেট বা ডিগ্রির নাম কেন ব্যবহার করা হয়? এ ব্যাপারে কথা না বাড়িয়ে এটা বলা খুবই দরকার যে, ইংরেজি এখন প্রধান আন্তর্জাতিক ভাষা। বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ বিভিন্ন কারণে ইংরেজির কোনো বিকল্প নেই।
ইংরেজি জানা মানে মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করা নয়। এটা বলা অনাবশ্যক যে, মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির কোনো বিকল্প নেই। তাই বলে বিশ্বায়নের এই যুগে ইংরেজিকে অবহেলা করার অর্থ হবে বড় ধরনের মূর্খতা এবং জাতীয় সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির মারাত্মক ক্ষতি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে, এমনকি বিশ্বসভায় সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইংরেজি জানা বাঙালিরাই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সেই গীতাঞ্জলি তিনি স্বয়ং ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। কবিতার মতো নিগূঢ় অর্থসংবলিত বিষয়কে ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য সে ভাষায় কতটা পারদর্শিতা দরকার তা সুধীজনের অজানা নয়। দেশের একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট পণ্ডিত ও লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিজে ইংরেজি ভাষার একজন অতিশয় মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সারা জীবন সেই ভাষায় অধ্যাপনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন এবং এখন তিনি ইমেরিটাস অধ্যাপক। তার শতাধিক পাণ্ডিত্যপূর্ণ বইয়ের মধ্যে মনে হয় ৯৮টি বাংলায় লেখা। আমার মতে, তিনি বাংলা গদ্যকে অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছেন এবং একটি বিশেষ স্টাইল প্রবর্তন করেছেন। অথচ তাকেও যখন দেখি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজিকে যথাযথ স্থান দিতে চান না, তখন দুঃখবোধ করি।
এখানে শিক্ষার কিছু বড় সমস্যার কথা বলাই আমার উদ্দেশ্য। তাই বলব, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মান বাড়ানোর বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সে পর্যায়ের শিক্ষার যে মূলনায়ক শিক্ষকরা, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের প্রেষিত ও অনুপ্রাণিত করতে হবে এবং একই সঙ্গে জবাবদিহিতার আওতায়ও আনতে হবে। প্রায়ই দেখি, তাদের বড় অংশই সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারে না। কেন পারে না, সেটা কি কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখেছে? তাদের অধিকাংশই শিক্ষা-দীক্ষায় বেজায় দুর্বল। এর ফলে তারা ভালো কোনো সরকারি বা বেসরকারি চাকরি পান না। তাই অনন্যোপায় হয়ে স্কুলে শিক্ষকতার চাকরির প্রয়াস চালান এবং নিয়ে থাকেন।
কয়েক বছর ধরে সরকার মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতার জন্য রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করেছে। এর জন্য পরীক্ষা দিতে হয়। এর আগে মাধ্যমিক স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি সরাসরি নিয়োগ দান করত। তাতে প্রাধান্য পেত স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য। আমার বেশ কয়েকজন ছাত্র, যারা ডিসি বা এডিসি হিসেবে জেলা পর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের কাছে শুনেছি তখনকার এমপি অন্তত তার এলাকার চারটি মাধ্যমিক স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান থাকতে পারতেন। এমপিদের কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে ওইসব স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দান করতেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিশেষ বিবেচ্য বিষয় ছিল না। একটি ডিগ্রি সনদ থাকলেই হল। আর যে যত বেশি টাকা দিতে পারত তারই চাকরি জুটত। এভাবে ক্রমাগত অযোগ্য ও দুর্বল শিক্ষকের সমাহারও মাধ্যমিকে শিক্ষার মানের পতনের অন্যতম কারণ। আর এর ফলে শিক্ষার উচ্চতর প্রতিটি স্তরে এই ভাষা ও গণিতের দুর্বলতা শিক্ষার মানকে দুর্বল করে।
আগেই বলা হয়েছে, শিক্ষকই শিক্ষার মূল নায়ক। আমাদের সমাজে শিক্ষকরা বহুকাল থেকেই ‘গরিব মাস্টার’ বলে পরিচিত। গরিব দেশে আয়-রোজগার এবং ক্ষমতা-প্রতিপত্তি দ্বারা একজন মানুষের সামাজিক মর্যাদা নিরূপিত হয়। শিক্ষকতায় আমাদের দেশে এ দুটোরই অভাব রয়েছে। তাই মেধাবী বা প্রতিভাবান তরুণরা সাধারণত এ পেশায় আকৃষ্ট হয় না। যারা বাধ্য হয়ে আসে তাদেরও একটি বড় অংশের প্রবণতা থাকে শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের চেয়ে প্রাইভেট টিউশন বা কোচিং বাণিজ্যের। কাজটি অনৈতিক বা অবৈধ। কিন্তু এ দেশে আর দশটি চাকরিতে অবৈধ রোজগারের সুযোগ থাকলে তা শিক্ষকদের ক্ষেত্রে অবৈধ হবে কেন- এমন মন্তব্য আমি বহু শিক্ষকের কাছে শুনেছি।
এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন নামে কোচিং বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ইভনিং বা সান্ধ্যকালীন কোর্সের প্রবর্তন এর একটি উদাহরণ বলে বিবেচিত হতে পারে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক দিনে ও রাতে ক্লাস নিলে তিনি পড়েন কখন এবং প্রস্তুতি নেন কীভাবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। কিছুদিন আগে এশিয়ার ১০০টি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। এমনকি একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে অভিহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও নাম তালিকায় নেই। অথচ পার্বত্য দেশ নেপালের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে বলে শোনা যায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও ডিগ্রির মানের বিষয়টি বহুল আলোচিত। এ ধরনের গোটা দু-তিনেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সবই যে নিুমানের এবং বেশকিছু যে সার্টিফিকেট বিক্রির কারখানা তা ওয়াকেবহাল মহলের অজানা নয়। এ ধরনের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বই দেখে পরীক্ষা দেয়া যায় বলে অভিযোগ আছে। দু-একজন নীতিবান শিক্ষক এ ব্যাপারে কড়াকড়ি করার কারণে চাকরি হারিয়েছেন বলেও শোনা যায়।
শিক্ষার সমস্যাটি বিরাট জাতীয় সমস্যা। আগেই বলেছি, এর মূলে আছে মাধ্যমিক স্তরের সমস্যাটি। এর জন্য চাই যথাযথ শিক্ষা এবং উপযুক্ত শিক্ষক। এ স্তরের শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য প্রান্তিক সুবিধার সুব্যবস্থা করা বিশেষ দরকার। তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশেষ করে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ স্তরের শিক্ষকরা বেজায় অবহেলিত। এমন বহু শিক্ষক আছেন, যারা ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কোনো পদোন্নতি পাননি। শিক্ষাদানে তাদের উৎসাহের অভাবের এটি একটি বড় কারণ।
চাকরির ৫ বছর পর টাইম স্কেল প্রদান এবং ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীতকরণ একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য সিনিয়র টিচার বা জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের পদ সৃষ্টি একান্ত দরকার। তাছাড়া মাধ্যমিকে ভালো শিক্ষক পাওয়া যাবে না।
বেসরকারি স্কুলগুলোকে সরকারীকরণের প্রক্রিয়া চলছে বলে মনে হয়। এর আলোকেই উপরে সামান্য কিছু সুপারিশ করা গেল। ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ এবং ‘শিক্ষকই মানুষ গড়ার কারিগর’- এসব মহাজন বাক্যকে বাস্তবে অর্থপূর্ণ করতে হলে উপরোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়