সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার সময় অভিভাবকদের কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন রিয়াজুল হক। শনিবার (২০ জুলাই) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এসব পরামর্শ দেন তিনি।
১. আপনার সন্তানকে বাড়ির পাশের স্কুলে ভর্তি করান। এতে করে আপনি আপনার সন্তানের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখতে পারবেন। একইসঙ্গে তাকে কিংবা আপনাকে যাতায়াতের ধকল পোহাতে হবে না। মহামূল্যবান সময় নষ্ট হবে না।
২. নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেছনে ছুটে বেড়ানোর প্রয়োজন নেই। যে সকল শিক্ষিত বাবা-মা আছেন, তাদের উচিত লেখাপড়ার জন্য দিনের সামান্য কিছু সময় সন্তানদের দেয়া। নিজেদের সন্তানদের নিজেরাই পড়ান। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। অথচ আপনার সন্তানকে পড়াচ্ছেন এসএসসি-এইচএসসি পাস করা কারো কাছে। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? আপনি আপনার শিক্ষা, মেধা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করছেন। নিজের সন্তানের জন্য নয়। যদি পড়াতে না পারেন, আপনার সন্তানের হাত ধরে রাস্তায় এক ঘণ্টা করে ঘুরে বেড়ান।
৩. অনেক অভিভাবক এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অবজ্ঞা করেন। এটা ঠিক না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইয়ের সংখ্যা কম, বাচ্চাদের উপযোগী করেই বইগুলো তৈরি করা হয়, অতিরিক্ত বইয়ের চাপও থাকে না। তা ছাড়া প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা সরকারি বইগুলোর ওপর হয়। অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ১১-১২টা বই পড়ানো হয়। এত বইয়ের চাপ অবুঝ বাচ্চাগুলোকে দিয়ে লাভ কী? অভিভাবকদের একটু চিন্তা করা প্রয়োজন।
৪. সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন। স্কুলে, কোচিংয়ে আপনার সন্তান কোন ধরনের শারীরিক, মানসিক নিপীড়নের স্বীকার হলে জানার চেষ্টা করুন। বাবা-মাকে যদি সন্তান বলতে না পারে, তবে তাদের মধ্যে ভয় কাজ করবে। লেখাপড়ায় কখনো মনযোগী হতে পারবে না। বেশি সমস্যা মনে হলে অবশ্যই সন্তানকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসুন। অমুক স্কুলে না পড়লে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
এখনকার অভিভাবকরা অনেক শিক্ষিত। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন। নচিকেতার একটা গানের সাথে যেন মিলে যায়-
‘বাচ্চা হবেই শুনে চারিদিকে খোঁজ খোঁজ/ কটা ভালো স্কুল আছে আলোচনা রোজ রোজ‘।
বাচ্চা হবার দিন থেকেই উদ্বিগ্নতা শুরু। এই উদ্বিগ্নতা সকল অভিভাবকদের দূর হোক, এটাই প্রত্যাশা। কারণ আপনার অহেতুক দুঃশ্চিন্তা বাচ্চার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
লেখক : উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।