সরকারি চাকরিতেই প্রায় ৪ লাখ পদ খালি - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি চাকরিতেই প্রায় ৪ লাখ পদ খালি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮। করোনার কারণে গত ৬ মাস ধরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত থাকায় এ সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। এসব পদে নিয়োগ পেতে অপেক্ষায় আছেন ২০ লাখের বেশি শিক্ষিত বেকার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ডিগ্রি আছে এমন বেকারের সংখ্যা চার লাখ। সোমবার (১৯ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায় । প্রতিবেদনটি লিখেছেন উবায়দুল্লাহ বাদল। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এইচএসসি ও এসএসসি পাস বেকারের সংখ্যা ১৬ লাখের বেশি। করোনায় স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরীক্ষার পর খাতা দেখে প্রার্থী কে বাছাই করবে তা চূড়ান্ত হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যয় অনুমোদন হচ্ছে না। এছাড়া নিয়োগবিধি চূড়ান্ত না হওয়া, মামলা, প্রশাসনিক জটিলতাসহ যোগ্য প্রার্থীর অভাবেও অনেক পদে নিয়োগ আটকে আছে।

গত জানুয়ারিতে ৪১তম বিসিএসে চার লাখ ৭৫ হাজার পরীক্ষার্থী আবেদন করে বসে আছেন। কবে পরীক্ষা হবে কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ব্যবসার অবস্থা ভালো না হওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে নিয়োগ বন্ধ, উল্টো অনেক প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই করছে। এরা বেকারের তালিকাভুক্ত হচ্ছে।

গত ২৯ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে সরকারি চাকরিতে মোট পদের ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ শূন্য ছিল। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ২১ দশমিক ২৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ১৮ লাখ ২১ হাজার ২৮৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬ জন কর্মরত আছেন।

ফলে শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮। শূন্য পদগুলোর মধ্যে ৫০ হাজার ৯৩০টি প্রথম শ্রেণির, ৫৫ হাজার ৪৫৭টি দ্বিতীয় শ্রেণির, এক লাখ ৮৮ হাজার ৩৭৭টি তৃতীয় শ্রেণির এবং চতুর্থ শ্রেণির পদ ৯২ হাজার ৫৭৪টি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিপুলসংখ্যক পদের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বলছে, স্বীকৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেকার ছিল প্রায় ২৭ লাখ।

এদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত, বাকিরা শিক্ষাবঞ্চিত। কর্মসংস্থান বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩০ লাখে উঠতে পারে। বেকারত্বের হারের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়।

এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘পদ খালি বা পূরণ হওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে পদগুলো পূরণে চাপও আছে। কিন্তু কারোনা মহামারীর কারণে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।

এ অবস্থায় চাইলেই শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া যায় না। লাখ লাখ চাকরি প্রত্যাশীর পরীক্ষা নেয়ার মতো সুযোগও থাকতে হবে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে পদগুলো পূরণ করা যাচ্ছে না। অবশ্যই শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করা উচিত।’

শূন্যপদ পূরণের বাধা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু পদে নিয়োগবিধি চূড়ান্ত না হওয়ায় নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলার কারণে নিয়োগ আটকে আছে। কিছু কিছু পদে কাঙ্ক্ষিত যোগ্য প্রার্থীর অভাব। তবে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার কারণে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না তা হল কারোনা মহামারী। করোনার কারণেও অনেক নিয়োগ আটকে গেছে। কোনো কোনো পদের জন্য ১০ থেকে ১৫ লাখ প্রার্থী রয়েছে।

প্রতিটি বিসিএসে এখন ৪-৫ লাখ প্রার্থী পরীক্ষা দিয়ে থাকে। এজন্য রাজধানীসহ ৮ বিভাগের শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দরকার, যা এখন বন্ধ। এগুলো না খুললে, যথাযথ প্রস্তুতি না নিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব শূন্যপদ দ্রুত পূরণের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রতিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়ও কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।’

জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ক্ষেত্রবিশেষ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও এ সংক্রান্ত কাজ করে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর বিস্তার বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির মধ্যে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি পিএসসি। ৩০ মে সাধারণ ছুটি শেষে জুনের প্রথম সপ্তাহে নন-ক্যাডারে বেশ কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পিএসসি। কিছু মন্ত্রণালয় হাতেগোনা কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। খাদ্য অধিদফতর ১১৬৬টি শূন্য পদের বিপরীতে দরখাস্ত আহ্বান করেছিল ২০১৮ সালের ১১ জুলাই। আবেদন পড়ে ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৩টি।

এই বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটি আইবিএ, এমআইএস, বুয়েট ও এমআইএসটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। এর মধ্যে এমআইএস পরীক্ষা নিতে ২৮ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রস্তাবে ত্রুটি থাকায় তা ফিরিয়ে দেয়া হয়।

নতুন করে বিকল্প প্রস্তাব তৈরির আগেই গত বছরের ২৪ অক্টোবর জারি করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং অধীনস্থ দফতরে বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে কর্মচারী নিয়োগের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারির পর আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের অধীনস্থ সংস্থা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) এ ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। তবে তারা মৌখিকভাবে জানিয়েছে, শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ শুধু শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষাই নিতে পারে। আইন অনুসারে তারা অন্য বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিতে পারে কি না- তা খতিয়ে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব কারণে নিয়োগটি আটকে যায়। এরই মধ্যে শুরু হয় করোনার প্রকোপ।

পিএসসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ছোটখাটো নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হলেও এখনই বিসিএসের মতো বড় পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছেন না তারা। গত জানুয়ারিতে ৪১তম বিসিএসে চার লাখ ৭৫ হাজার পরীক্ষার্থী আবেদন করলেও এ পরীক্ষা শিগগিরই নেয়ার সুযোগ নেই। ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এ বছরের এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল আটকে আছে করোনার কারণে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিএসসির সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণেই মূলত বিসিএসসহ বড় ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কিছু আইনগত ও প্রশাসনিক সমস্যাও রয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে। তবে নতুন বিধিমালা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এসব পদে যেভাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে সেভাবেই চলবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে বলে আমার বিশ্বাস।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071649551391602