সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মানসিকতা - দৈনিকশিক্ষা

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মানসিকতা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

করোনা ভাইরাস অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে রোগ। যা চীন থেকে শুরু হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগের কোনো ওষুধ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। যার ফলে লাখ লাখ মানুষ এ ব্যাধিতে মৃত্যুবরণ করে যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঘরে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ মিনিট কয়েকবার হাত ধোয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। অতি প্রয়োজনে বাড়ির যেতে হলে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস ও চশমা পরিধান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাট ও হাটে-বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারটি আমাদের দেশে আজও উপেক্ষিত। এ অদৃশ্য ঘাতক ব্যাধি নিয়ে আজও আমাদের দেশের মানুষ উদাসীন। তারা চিরাচরিত সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে অভ্যস্ত। টিসিবির পণ্য কিনতে, হাট-বাজারে ঠেলাঠেলি করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে অভ্যস্ত। একটুখানি সময় নিয়ে নিয়ম মানতে অভ্যস্ত নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে তাদের চোখের আড়ালে ‘যেই লাউ, সেই কদু’ প্রবাদের মতো আচরণ করে।

বিপুল সংখ্যক মানুষ ধর্মীয় কুসংস্কারে বেড়াজালে আবদ্ধ। একটা চিরন্তন সত্য যে, প্রত্যেকের জন্ম, মৃত্যু, রিজিক মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তালার হাতে। এ বাস্তব সত্যটিকে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরাই বিশ্বাস করে। পবিত্র কোরানে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কাজকর্ম, ব্যবসা বাণিজ্য ও চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে জীবন ব্যবস্তার সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। সে মোতাবেক এ ছোঁয়াচে রোগ থেকে মুক্তির জন্য পবিত্র কাবা ও মদিনা শরিফে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আপাতত মসজিদের পরিবর্তে বাসায় নামাজ পড়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও সীমিত আকারে মসজিদে নামাজ ও মৃতদেহের জানাযা পড়ার নির্দেশনা আছে। অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাওলানা জুবায়ের আহম্মদ আনসারীর জানাযায় বিপুল পরিমাণ লোক অংশগ্রহণ করেন। এতে সামাজিক দূরত্ব বিঘ্নিত হয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ জানাযার মাধ্যমে করোনা যেন না ছড়িয়ে পড়ে তাই সবাইকে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ জানাই।

মাওলানা জুবায়ের আনসারীর আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করি। তিনি একজন বিশাল মানের আলেম। তাঁকে যেন আল্লাহ বেহেশত নসিব করেন; অসংখ্য ভক্ত জানাযায় না এসেও ঘরে বসে তার জন্য এ দোয়া করতে পারতেন। করোনার মহাদুর্যোগের পর আরও বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে আলোচনা ও দোয়া করতে পারবেন। এমন দুর্যোগের মুহূর্তে সংক্রমিত হওয়ার এমন ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষকে বিপদে ফেলার অধিকার জানাযার আয়োজকদের ইসলাম ধর্মের কোথাও দেয়া আছে বলে আমার জানা নাই। এই অদৃশ্য মহামারির হাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য বাড়িতে অবস্থান করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রার্থনা করতে হবে।

আমরা মুসলমানরা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য ওযুর মাঝে সাবান দিয়ে দিনে কমপক্ষে পাঁচবার হাত ধুতে পারি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিভিন্নভাবে বার বার সামাজিক দূরত্ব না মানার জন্য একতরফাভাবে জনসাধারণকে দোষারোপ করে থাকে। খুব নগণ্য সংখ্যক লোক অহেতুক এ মহামারিতে বাইরে বের হয়। বাকি যারা বের হয় নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন।

দীর্ঘদিন বাসায় বসে থেকে খাদ্য, অর্থ ও চিকিৎসার সংকটে আছে মানুষ। বর্তমান সরকার গরিব মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা না পারে কিছু চাইতে, না পারে ভিক্ষা করতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রেশন কার্ড তাদের কিছুটা সহায়তা করবে।

লকডাউন শুধু আক্রান্ত মহল বা নির্দিষ্ট বাড়ি করা হলে মানুষ অনেকটা স্বস্তির নিশ্বাস নেবে। সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রেখে পর্যায়ক্রমে সব ব্যবসা বাণিজ্য সীমিত আকারেও খুলে দেয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র করোনা ভাইরাস নয়, অভাবের জ্বালাও মানুষকে অস্থির করে তুলছে। আমরা দুইটি যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। যারা মাসে মাসে সাধারণ ছুটিতে বসে বসে বেতন পায় তাদের কেউ কেউ কর্মহীন রোজগারবিহীন মানুষের যন্ত্রণা সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। কবির ভাষায়- ‘চিরসুখী জন ব্যতিত বেদন ভ্রমে কি কখন বুঝিতে কি পারে’।

আমার সিনিয়র পেনশন ভোগীদের আর্তনাদ নিবন্ধটি প্রকাশের পর জনৈক প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরোধিতা করেন। আমি ফেসবুকে প্রথমে নিবন্ধটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য আহ্বান জানাই। আমি তাকে কোনো দোষারোপ করছি না। তবে খানিকটা দুঃখিত লেখাটি পড়ে তা অনুধাবন না করার জন্য। শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক, একজন সিনিয়র পেনশন ভোগী সর্ব সাকুল্যে ২৫০০ থেকে ৭০০০ টাকা পান। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেননি। তার ভাবনা হয়তো- সিনিয়র পেনশন ভোগীরা সবাই তার মতো মানসিকভাবে শক্তিমান, স্বাস্থ্যবান, সুস্থ ও কমপক্ষে ২৫-৩০ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকেন। আর্থিক অভাব অনটনে চিকিৎসার ব্যয় ও অন্যান্য ব্যয় মিটানোর জন্য লকডাউন উপেক্ষা করে আমাকে ৭০ বছর বয়সে ২৭ বছর বয়সী যুবকের মতো ঘর থেকে বের হতে হয়েছে। এ নিদারুন সংকটের মধ্যে বসবাস করে বাস্তব কথা লিখে যাচ্ছি মাত্র।

তৃণমূলের বিত্তশালী, জনপ্রতিনিধিরা গরিব, নিম্নবিত্ত, মথ্যবিত্তের অভাব মিটানোর জন্য এগিয়ে আসে তা হলে জনগণ ঘরের বাইরে বের হবে না। মানুষ অবশ্যই লকডাউন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে।

মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা, বিত্তবান ও জনপ্রতিনিধিরা যাতে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের সহানুভূতিতেই শীঘ্রই দূর হবে করোনা ভাইরাসের মতো মহামারি।

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060901641845703