সুঁই-সুতোয় গাঁথা হয় মারিয়ার শিক্ষাজীবন - দৈনিকশিক্ষা

সুঁই-সুতোয় গাঁথা হয় মারিয়ার শিক্ষাজীবন

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) |

ছোট্র হাতের আঙুলে অজস্র সুঁইয়ের খোঁচা। কিন্তু তারপরও এক মনে রং-বেরঙের সুতো দিয়ে কাঁথায় ফুটিয়ে তুলছে নকশা।সুঁই-সুতোর বন্ধনে ফুটিয়ে তুলছে বাঙালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য ও হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সংস্কৃতি। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মারিয়ার এখন সহপাঠীদের খেলা-আনন্দে সময় কাটানোর কথা হলেও পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে সুঁই-সুঁতোর নকশায় ফুটে উঠতে চায় তার শিক্ষা জীবন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের নেছারউদ্দিন হাওলাদারের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মারিয়া সবার ছোট। ইটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এ ছাত্রীর স্কুল ও পড়াশোনার অবসরে মায়ের সাথে নকশি কাঁথা সেলাই করে চলে শিক্ষা ও সংসার খরচ। ছোট্ট বয়সেই এখন সে নিপুণ কারিগর।

সরেজমিনে রোববার দুপুরে মারিয়াদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকায় ঘরের বাড়ান্দায় কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত সে। তার সহপাঠীরা যখন ঘরের উঠানে গোল্লাছুট, বাড়ির পুকুরে সাঁতার কেটে হাসি আনন্দে ব্যস্ত,
তখন একমনে কাঁথায় এঁকে চলছে গ্রামীণ প্রকৃতি।

মারিয়া জানায়, ‘মায়ের কাঁথা সেলাই করা দেখতে দেখতে ক্লাস ওয়ান, টুতে পড়া অবস্থায়ই সুঁই-সুতো নিয়ে গায়ের জামা, বিছানার চাদরে ফুল, ফল আঁকতাম। স্কুলে বিভিন্ন দিবসে নানা ধরণের ছবি আঁকতে আঁকতে শিখে ফেলেছি নকশি কাঁথা
সেলাই। এখন স্কুল বন্ধ তাই এই কাঁথা সেলাই করছি।’

মারিয়ার মা হালিমা বেগম জানায়, রান্না থেকে শুরু করে গৃহের সবকাজই শিখে ফেলেছে ও। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে, স্কুলের ছুটিতে ঘরে বসে সেলাই করে এই কাঁথা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন আসে কাঁথা সেলাইয়ের জন্য। কারো ইচ্ছা পাতলা কাঁথা, কারো ইচ্ছা মোটা কাঁথা। তবে নকশি কাঁথা সেলাই হয় খুবই কম। কেননা একেকটি কাঁথা সেলাই করতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। তিনি বলেন, বড় ছেলে শামিম এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট ছেলে হাসান অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মারিয়া চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। কিন্তু ওদের বাবা কখনও খালে মাছ ধরে, কখনও মাটি কাটে। মাঝে মধ্যেই কাজ না থাকলে ঘরে বেকার বসে থাকে। দারিদ্র্যের মধ্যে তিন সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য পরিবারে একটু আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চার বছর ধরে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করছেন। মাসে পাতলা কাঁথা হলে আট থেকে দশটি, মোটা কাঁথা হলে দুই-তিনটি ও নকশি কাঁথা হলে একটির বেশি সেলাই করা যায় না। মারিয়া একটু বড় হওয়ার পর এখন নকশি কাঁথার আল্পনাও ওই আঁকে। বয়সে ছোট হলেও মারিয়া এই বয়সে জেনে গেছে বিভিন্ন ধরণের কাঁথার নাম।

মারিয়ার ভাষায়, চলমান সেলাই (সাদামাটা কাঁথা), লহরী কাঁথা, আনারসি কাঁথা, বাঁকা সেলাই কাঁথা, সুজনি কাঁথা, পদ্ম নকশা, সুর্য নকশা, চন্দ্র নকশা, চাকা নকশা, স্বস্তিকা নকশা কাঁথা সেলাই করতে পারি। এছাড়াও গুজনি কাঁথা, রুমাল কাঁথা, আসন কাঁথা, আর্শিলতা কাঁথা সেলাই শিখেছি। কিন্তু সময় হয় না এগুলো সেলাই করা। এছাড়া এই কাঁথা তৈরি করতে খরচও অনেক বেশি।

মারিয়া জানায়, লেখাপড়া করে বড় চাকরি করা ও ছবি আঁকা শিল্পী হওয়ার ইচ্ছার কথা। কিন্তু পারিবারিক দৈন্যদশায় কতোটা লেখাপড়া করতে পারবে এ দুশ্চিন্তা এই বয়সেই তাকে ঘিরে রেখেছে। 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041618347167969