নোট-গাইড বইয়ের প্রশ্নের অনুকরণে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পাবলিক পরীক্ষার কোন কোন প্রশ্নের সঙ্গে নোট-গাইডের প্রশ্নের হুবহু মিল রয়েছে। চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রণীত প্রশ্নে অনেক ত্রুটিও ঘটেছে। পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেতে ঘটেছে নানা অনিয়ম। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার সংবাদ এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে ২০১০ সালে। এরপর গত এক দশকে ৯ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তাকে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গত ৫ বছরে এ বাবদ দুই হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এরপরও সৃজনশীল পদ্ধতি আত্মস্থ করতে পারেননি বিপুল-সংখ্যক শিক্ষক। স্কুল পর্যায়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে না পারার অক্ষমতার কথা সবাই জানে। প্রশ্ন হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষায়ও কি সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন করার মতো লোকবল দেশে তৈরি হয়নি। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা দেখে আমরা অবাক না হয়ে পারি না। এ দেশে নোট-গাইড লেখা বা সেখানে প্রশ্ন তৈরি করার লোকের অভাব নেই। অনদিকে শ্রেণীকক্ষে তো বটেই, পাবলিক পরীক্ষাও সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন করার লোক নেই। তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে লাখ লাখ শিক্ষকদের কী শেখানো হলো!
সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষণে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয় না। কত দ্রুত বেশি-সংখ্যক শিক্ষককে ট্রেনিং সেন্টারে নেয়া যায়-সেটাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকরা ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে কী শিখছেন, বাস্তবে তার কতটা প্রয়োগ ঘটাতে পারছেন-সেটা নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। এর মধ্যে থেকেও অনেক শিক্ষক ঠিকই নিজ যোগ্যতাবলে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রশ্ন করা শিখছেন। সমস্যা হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন এসব শিক্ষকদের কাজে লাগানো হয় না। যারা নোট-গাইড প্রণয়ন করে বা বাণিজ্য করে খুঁজে খুঁজে তাদেরই প্রশ্ন প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। আর এ কারণেই প্রশ্নও ফাঁস হয়।
পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়নে দুর্বলতা বা ত্রুটি দূর করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। পরীক্ষায় নকল করে উত্তর লেখার জন্য যেমন শাস্তি দেয়া হয়, নকল করে প্রশ্ন প্রণয়নের জন্যও তেমন শাস্তি দেয়া বাঞ্ছনীয়। নকল প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়নে দক্ষ শিক্ষকদের ওপর পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষক প্রশিক্ষণে গুণগত মানের ওপর জোর দেয়া জরুরি। শিক্ষকরাই যদি সৃজনশীল পদ্ধতি না বোঝেন তবে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে!