সেশনজটে ভুগছে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

সেশনজটে ভুগছে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ৪১তম ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের প্রথম দিকে। কিন্তু বিভাগটি ফল প্রকাশ করে এক বছর পর গতকাল।

ফলে বর্তমানে ৪২তম ব্যাচের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর কোর্স তিন মাস আগে শেষ হলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। আর ৪২তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় ক্লাস শুরু হলেও স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে পারছে না ৪৩তম ব্যাচের (২০১৭-১৮) শিক্ষার্থীরা। এভাবে বর্তমানে শুধু স্নাতকোত্তর পর্যায়েই দুটি ব্যাচ রয়েছে বিভাগটিতে। শুধু এ বিভাগেই নয়, জাবির বেশ কিছু বিভাগে সেশনজটের কারণে ঝুলে আছে শিক্ষার্থীদের কর্মজীবন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই দেরিতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করা, দেরিতে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, রুটিন অনুুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা নিতে শিক্ষকদের অনীহা ও স্বেচ্ছাচারিতা, সান্ধ্যকালীন কোর্সে বেশি সময় দেওয়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকা, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট, এক ব্যাচের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আরেক ব্যাচের নেওয়া ইত্যাদি কারণে সেশনজট হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকলেও অনেক শিক্ষকই তা মানেন না। এ ছাড়া কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁরা ইচ্ছা করেই বছরের বেশির ভাগ সময় বিভাগে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। যথাসময়ে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নও করেন না অনেকে।

কয়েকটি শিক্ষাবর্ষ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ২৮ মার্চ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ১২ মার্চ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৯ মার্চ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ৫ ফেব্রুয়ারি।

অথচ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ জানুয়ারিতেই ক্লাস শুরু করে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আইন অনুষদে এক বছরের, কলা ও মানবিকী অনুষদে বাংলা বিভাগ ছাড়া সব বিভাগে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ছাড়া বাকি পাঁচটি বিভাগে ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত সেশনজট রয়েছে। এ ছাড়া গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিং বিভাগ, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগে এক বছর করে; পরিসংখ্যান বিভাগ, গণিত বিভাগে ছয় মাস করে; জীববিজ্ঞান অনুষদের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে দেড় বছরের, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ছয় মাস করে ও ফার্মেসি বিভাগে দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের প্রায় প্রতিটি বিভাগে রয়েছে ছয় মাস থেকে এক বছরের সেশনজট। তবে অনুষদ ও বিভাগভেদে কোনো কোনো ব্যাচে সেশনজট আরো বেশি। বাকি প্রায় প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা দুই থেকে তিন মাসের সেশনজট ভুগছে।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা, নিয়ম অনুযায়ী ক্লাস না নেওয়া ইত্যাদি কারণে আমাদের বিভাগ দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। ’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘জাবিতে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করতে না করতেই শিক্ষার্থীরা দুই মাসের সেশনজটে পড়ে যায়। পরে বিভিন্ন কারণে জট বাড়তে থাকে। শিক্ষকরা বাণিজ্যিক কোর্সগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘জট দূরীকরণে যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ’

নিয়ম অনুযায়ী এক সেমিস্টারের মেয়াদ ছয় মাস। কিন্তু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো বিভাগ এক সেমিস্টার ১২ মাসেও শেষ করতে পারছে না। এ কারণে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ সেশনজট। শিক্ষার্থীদের দাবি, এর কারণ শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে অবহেলা, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনীহা ও আলসেমি।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা এমন যে একই সেশনে ভর্তি হওয়ার পর কিছু বিভাগের শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে। অনেকে সেশনজটে পড়ে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি।

নিয়মানুযায়ী, স্নাতকে চারটি ও স্নাতকোত্তরে একটি ব্যাচ থাকার কথা। সেখানে স্নাতকে ছয় থেকে সাতটি এবং বেশ কয়েকটি বিভাগে স্নাতকোত্তরে দুটি ব্যাচ রয়েছে। স্নাতক-স্নতকোত্তর মিলিয়ে পাঁচ বছরের বদলে লাগে সাত থেকে আট বছর। এমনকি অনেক সময় তারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে ঝরে পড়ছে অনেকগুলো সম্ভাবনাময় বছর। তেমনি অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তাঁদের চাকরিতে ঢোকার সুযোগও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিবছর বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ছে হাজারো শিক্ষার্থী।

সেশনজটের কারণে এখনো রয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২০১০-১১ এবং ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অথচ দুই বছর আগেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছেন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগে কমপক্ষে গড়ে দুই থেকে তিন বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। চারুকলা, অর্থনীতি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সেশনজটের মাত্রা অন্য বিভাগের চেয়ে বেশি। স্নাতক-স্নাতকোত্তর মিলে পাঁচটি ব্যাচ থাকার কথা থাকলেও চারুকলায় আছে ৯টি, অর্থনীতিতে আছে আটটি ব্যাচ। এ ছাড়া মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, সংগীত, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে আছে সাতটি করে ব্যাচ। এদিকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতকোত্তর না থাকায় স্নাতকেই আছে সাতটি ব্যাচ। ফলে ২০১৫ সালে স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেশনজটের কারণে তা শেষ হচ্ছে ২০১৭ সালের শেষের দিকে অথবা ২০১৮ সালে। স্নাতকোত্তরেও একই অবস্থা। চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল পেতে আরো চলে যায় এক বছর। সেশনজটের এই ভয়াল চিত্রে শিক্ষাজীবন নিয়ে আতঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা মূল্যায়ন হয় দুবার। বিভাগের একজন শিক্ষক খাতা মূল্যায়ন শেষে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। খাতা মূল্যায়নের এমন দীর্ঘসূত্রতার সঙ্গে যোগ হয় শিক্ষকদের অনীহা ও আলসেমি। কিন্তু ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগরসহ পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হয় না। বিধায় ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট তেমন নয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খাতা পাঠানোর দীর্ঘসূত্রতার কারণেই এ সেশনজট।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সেশনজট দূর করার জন্য সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের বলেছি, আর যেন কোনো শিক্ষার্থী সেশনজটের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ’

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074009895324707