যুগ যুগ ধরে শৈলকূপার ভাটই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট বসে আসছে। প্রতি রোববার বসে এ পশুর হাট। হাটের দিন স্কুলের প্রবেশপথও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। চারদিকে গরু-মহিষের গোবর আর খড়ে নোংরা হয় পরিবেশ। হাটের কোলাহলে নষ্ট স্কুলের সার্বিক পরিবেশ। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, যুগের পর যুগ ঝিনাইদহের শৈলকূপার ৮০নং ভাটই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এভাবেই চলে আসছে পাঠদান। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এলাকাবাসী জানান, ঝিনাইদহসহ আশপাশের মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীদের কাছে গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, মহিষ ক্রয়-বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ এই ভাটই পশুহাট। এ হাটটি ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারী ও খুচরা বিক্রেতা আসেন এ হাটে পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে। হাটের দিনে স্কুলের তিনটি ভবনের সামনে পশুর হাটসহ পশুবহনকারী অবৈধ নছিমন, করিমন, আলমসাধুসহ নানা ধরনের শত শত যান পার্ক করা থাকে। যার ফলে কোনো ছাত্রছাত্রী ইচ্ছা থাকলেও শ্রেণিকক্ষের বাইরে আসতে পারে না। দরজা-জানালা বন্ধ করে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে হয় ভবনের মধ্যে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, স্কুল মাঠের এ হাটে মহিষদের তেজ দেখাতে ব্যাপারীরা আর দালালরা লাঠির মাথায় এক ধরনের পেরেক লাগিয়ে সেই পেরেক পশুর শরীরে ফুটিয়ে দেন। এতে পশু দিজ্ঞ্বিদিক দৌড় দেয়। মাঝে মাঝে শ্রেণিকক্ষেও ঢুকে পড়ে তেজি মহিষ। দালালরা স্কুলের বারান্দায় বসে ধূমপান করে। স্কুল মাঠে প্রতি রোববার পশুর হাট বসার কারণে পাঠদানের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারেন না তারা। তাছাড়া হাটের দিন পশুর মল, বর্জ্য ও আবর্জনায় স্কুল ক্যাম্পাস ও বারান্দা নোংরা হয়ে থাকে। সব সময় দুর্গন্ধ থাকে স্কুলের পরিবেশে, যা পরের দিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিস্কার করতে হয়।
ভাটই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি দেখে আসছেন যুগ যুগ ধরে স্কুল মাঠে বসে পশুর হাট। জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী, স্কুল কর্তৃপক্ষ সবাই দেখেও না দেখার ভান করে চলে। প্রতি রোববার পশুর হাটের জন্য তাদের প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে হয়। এ থেকে প্রতিকারের উপায় হিসেবে স্কুলের চতুর্দিকে প্রাচীর নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
হাট কমিটির কোনো সদস্যকে না পাওয়া গেলেও হাটে আসা ব্যাপারী মফিজুল ইসলাম বলেন, স্কুল মাঠে হাটতো ছাত্রছাত্রীদের জন্য সমস্যা। হাট কমিটি তাদের যেখানে জায়গা দেবে, তারা সেখানে কেনাবেচা করবেন।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, স্কুল মাঠে পশুর হাট নিয়ে তারা সমস্যার মধ্যেই আছেন। হাট পরিচালনাকারীদের বললে তারা শোনে না। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের প্রাচীর নির্মাণ হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। হাট কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর স্কুলে ৫ হাজার টাকা দেয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
শৈলকূপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি ইউএনওকে অবহিত করেছেন। তিনি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট খুবই দৃষ্টিকটু। তিনি দ্রুত হাট কমিটি, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিসহ স্থানীয়দের সঙ্গে বসে পশুর হাটের সব সমস্যার সমাধান করবেন।