নাইজেরিয়ার নাগরিক আজাহ আনাইওচুকোয়া ওনিয়ানউসি স্টুডেন্ট ভিসায় এ দেশে আসেন। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হন। পাশাপাশি শুরু করেন পোশাকের ব্যবসা। তবে এসবই আড়াল মাত্র। মূলত তিনি নতুন মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। এ মাদক ইয়াবার চেয়ে শতগুণ শক্তিশালী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে তাকে গ্রেফতারের পর গতকাল শুক্রবার এসব তথ্য জানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তার কাছ থেকে ৫২২ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মোসাদ্দেক হোসেন রেজা জানান, মাদক চোরাচালানের আন্তর্জাতিক এই চক্রে আরও কয়েকজন রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওনিয়ানউসির দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
এর আগে দুপুরে সেগুনবাগিচায় অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, নতুন এই মাদকের বিস্তার রোধে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ওনিয়ানউসির ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়। এরপর মাদক কেনার ফাঁদ পেতে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খিলক্ষেত এলাকার হোটেল লা মেরিডিয়েনের বিপরীতে বিমানবন্দর সড়ক থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছে পাওয়া যায় ৫০ গ্রাম আইস। গোয়েন্দারা মাদকের সন্ধানে তার বাসায় যেতে চাইলে তিনি ঠিকানা বলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তার মোবাইল ফোনের তথ্য বিশ্নেষণ করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে আরও ৪৭২ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। এগুলো ৫/৬ দিন আগে ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে উগান্ডা থেকে আসে বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৩৮ বছর বয়সী ওনিয়ানউসি আশা ইউনিভার্সিটি থেকে বি ফার্মা পাস করার পরও দীর্ঘদিন ঢাকাতেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি নিষিদ্ধ 'ডার্ক নেটে'র সদস্য হয়ে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পোশাক ব্যবসার নাম করে তিনি ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, ভারত, উগান্ডা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যাতায়াত করেছেন। এসবের আড়ালে তিনি মূলত আইসের কারবার চালিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে আইস সরবরাহ করছিলেন তিনি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত মাদক ইয়াবার চেয়ে শতগুণ শক্তিশালী আইস। একবার সেবন শুরু করলে নির্ভরশীলতা চলে আসে। আরও বেশি সেবন করতে ইচ্ছা জাগে। আইসের দামও ইয়াবার চেয়ে বেশি। তবে নতুন এ মাদককে ছড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে ওনিয়ানউসি কম দামে তা বিক্রি করছিলেন। মালয়েশিয়ায় এক গ্রাম আইসের দাম বাংলাদেশি টাকায় তিন লাখেরও বেশি। অথচ তিনি ঢাকায় সাত থেকে ১০ হাজার টাকায় আইস বিক্রি করছিলেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জিগাতলার এক বাসায় আইস তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। হাসিব মোহাম্মদ মুয়াম্মার রশিদ নামের এক যুবক গবেষণাগারের আদলে ওই কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। অভিযানে সেখান থেকে ক্রিস্টাল মেথ তৈরির ১৩ ধরনের উপাদান জব্দ করা হয়েছিল।