হঠাৎ হল ছাড়ার নির্দেশে বিপাকে কুয়েট শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

হঠাৎ হল ছাড়ার নির্দেশে বিপাকে কুয়েট শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রতিনিধি |

সংঘর্ষের কারণে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই হল ছাড়তে শুরু করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২ নভেম্বর) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার কারণে যানবাহন সংকটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই দল ছাত্রের মধ্যে সংঘর্ষের পর কুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। 

শনিবার বিকেল ৫টার মধ্যে ছাত্রদের এবং রোববার (৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আচমকা হল ছাড়ার এ নির্দেশে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় শনিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীদের রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত হল ছাড়ার সময় বেধে দেয়া থাকলেও আতঙ্কগ্রস্ত অনেকেই সকাল থেকেই হল ত্যাগ করছেন।

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় সেশনজটের আশঙ্কা করছেন অনেক শিক্ষার্থী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত এ সংকট নিরসনের করে ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার দাবি জানান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, কুয়েটে ছেলেদের ছয়টি এবং মেয়েদের একটি মিলিয়ে মোট সাতটি হল রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী হলে থাকেন। সকাল থেকেই হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ করে এ ধরনের ঘোষণায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা ফিরতি টিকিট কেটে রাখায় কুয়েট শিক্ষার্থীরা বাস-ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন না। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীর খুলনায় কোনো আত্মীয় স্বজনও নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়েট ক্যাম্পাসের অমর একুশে হল ও ফজলুল হক হলের জানালার কাঁচ ভাঙা। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ক্যাম্পাসের হলগুলো বর্তমানে প্রায় শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে। তবে কুয়েটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকায় যথারীতি সকাল থেকে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুয়েটের এম এ রশীদ হল ও অমর একুশে হলের মধ্যে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এতে মধ্যরাতে ক্যাম্পাস বন্ধের নির্দেশনা আসে। গুটিকয়েক ছাত্রর জন্য এভাবে ক্যাম্পাস বন্ধ করায় আমাদের পড়ালেখায় সমস্যা হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে লেখাপড়ার ছন্দপতন ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও দায়িত্বশীল ও কঠোর হলে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতো না বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে কুয়েটের এমএ রশীদ হল ও ফজলুল হক হলের মধ্যে আন্তঃহল ফুটবল খেলা চলছিল। খেলা চলাকালীন বিকেল ৫টার দিকে রেফারির একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দুটি দলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় নাগাদ এ উত্তেজনা বেড়ে এম এ রশীদ হল, অমর একুশে হল ও ফজলুল হক হলে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অমর একুশে হল ও ফজলুল হক হলের জানালা ভাঙচুর করা হয়। রাতে উত্তেজনা আরও বাড়লে কুয়েট প্রশাসন জরুরি সভা ডেকে মধ্যরাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে শনিবার বিকেল ৫টার মধ্যে ছেলেদের সব হল খালি ও রোববার (৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মধ্যরাতে আচমকা হল ত্যাগের নির্দেশে বিপাকে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবক’টি হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করতে শুরু করেন।

কুয়েটের রেজিস্টার জি এম শহিদুল আলম অনিদিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিকেল ৫টার মধ্যে ছেলেদের সব হল খালি ও রোববার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীরদের হল খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আন্তঃহল ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দু’দল ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫/৬ আহত হয়েছে। পরে রাতে বিষয়টি নিয়ে হলগুলোতে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে এ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রাতেই কুয়েট ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিত সম্পর্কে জানার জন্য কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনকে বার বার তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, আন্তঃহল ফুটবল টুর্নামেন্টে শনিবার অমর একুশে হল এবং ড. রশিদ হলের মধ্যকার হাইভোল্টেজ খেলায় রেফারির দেয়া একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে অমর একুশে হলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খেলা গোল শূন্য ড্র হলে অমর একুশে হলের সমর্থকরা রেফারি শাহ আলমের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তার সহকর্মী আকবার এগিয়ে এলে তার ওপরও হামলা চালায় অমর একুশে হলের সমর্থকরা। ফজলুল হক হলের সমর্থকরা রেফারির মারধরের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করার সময় অমর একুশে হলের সঙ্গে ফজলুল হক হলের ছাত্রদের হাতাহাতি হয়। এ খবর ক্যাম্পাসের হলগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে অমর একুশে হল এবং ফজলুল হক হলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। রাতে দুই হলের মুখোমুখি অবস্থানের সময় হল প্রভোস্টরা হলে ছিলেন না। পরে তারা ঘটনার খবর শুনে হলে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র জানান, টুর্নামেন্টের শুরু থেকে টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির শৃঙ্খলার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব না দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, হল প্রভোস্টরা রাতে হলে না থাকায় রাতে হলের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057611465454102