রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলসের ক্যান্টিন কর্মচারী আবদুল মান্নানকে পিটিয়ে হত্যার পেছনে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের 'প্রতিশোধস্পৃহা'ও কাজ করেছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ তুলে পেটানো হলেও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জ্যেষ্ঠ ছাত্র হিসেবে তাদের বাড়তি সুবিধা না পাওয়ার ক্ষোভ। তবে মান্নান মোবাইল ফোন চুরি করেছিলেন কি-না তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আলী হোসেন খান বলেন, এ ঘটনায় গ্রেফতার আতিকুর, ফুয়াদ ও নাইম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আটক অপরজনের সম্পৃক্ততা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ হলের ৩১৮ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমানের মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে ক্যান্টিনের তিন কর্মচারীকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে মান্নানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার মামা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আহত অন্য দু'জন চিকিৎসাধীন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রদের মধ্যে সিনিয়র কয়েকজন ডাইনিংয়ে গিয়ে খাবার খেতেন না। তাদের খাবার ও পানি পৌঁছে দেয়া হতো রুমে। হত্যায় অভিযুক্ত আতিকুর ও তার বন্ধুরা এরই মধ্যে পাস করে গেলেও ছাত্রাবাসে অবস্থান করতেন। তারা আগের মতোই বাড়তি সুবিধা চাইছিলেন। তবে মান্নান তাদের আবদারে গুরুত্ব দেননি। তাদের অভিযোগ, আগের মতো সম্মান পাচ্ছিলেন না তারা। এ কারণে তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। মঙ্গলবার মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় তাই তারা প্রধান টার্গেট করেন মান্নানকে। চুরির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের নামে পুরনো ক্ষোভও মেটান তারা।
নিহতের ভাই আলমগীর হোসেন জানান, হত্যায় অভিযুক্ত আতিকুরের পাশের রুমে খাবার ও পানি পৌঁছে দিতেন মান্নান। বিনিময়ে তিনি কিছু টাকা পেতেন। মোবাইল ফোন চুরির পর আতিকুর জানতে পারেন, মান্নান পাশের রুমে খাবার দিতে এসেছিলেন। শুধু এ কারণেই তার কাঁধে চুরির দায় চাপানো হয়। অথচ মান্নান ছিলেন সহজ-সরল স্বভাবের মানুষ। মাত্র চার হাজার টাকা বেতনে তিনি সেখানে কাজ করতেন।
আলমগীরের অভিযোগ, তার ভাইয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ১২ হাজার টাকা নেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গের লোকরা। তবে তিনি টাকা গ্রহীতাদের নাম বলতে পারেননি।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে আতিকুর ও ফুয়াদকে রিমান্ডে নিয়ে ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।