হেলথ কেয়ারে শিশুদের স্কুল - দৈনিকশিক্ষা

হেলথ কেয়ারে শিশুদের স্কুল

শাহিনুল আশিক, রাজশাহী প্রতিনিধি |

‘ওয়ান গেল মাছ ধরতে, টু গেল তার সাথে, থ্রি বসে নৌকা চালায়, বৈঠা নিয়ে হাতে।’ এমন কবিতা শোনা যাচ্ছে রাস্তা থেকেই। ২৯ শিক্ষার্থী এক সঙ্গে শিক্ষকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পড়ছে কবিতাটি। রাজশাহী নগরীর ফুদকিপাড়া আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস অ্যান্ড ডেলিভারি সেন্টারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

যে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, হেলথ কেয়ারে স্কুল? তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদের অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তকরণের লক্ষ্যে (রাজশাহী সিটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়) এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২৫ বছর ধরে চলা রাসিকের এই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, শিক্ষা নগরীতে এমন কার্যক্রম নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে শিশুদের ক্লাসের জায়গাটা বড় করা হলে ভালো হতো।

এই স্কুলের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত ও ইতি রানী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘এখানে আপা পড়ায়, খেলা-ধুলা করায়। সুন্দর সুন্দর কবিতা বলে। অনেক ভালো লাগে।’ প্রতিদিন স্কুলে আসো তোমরা? এ প্রশ্নের উত্তরে ইতি রানী বলে, ‘আমার স্কুলে ভালো লাগে। আম্মুও এসে বসে থাকে। আর আমি পড়ি।’ 

স্কুলটির শিক্ষক নবিতা ভৌমিক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সকাল ৮টায় খোলা হয় স্কুল। ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই-একজন ছাড়া সবাই আসে প্রতিদিন। কোনো শিক্ষার্থী না আসলে বাড়িতে ফোন করা হয়। এলাকার স্কুল হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মায়েরাও বাইরে বসে থাকেন এখানে।

রাসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘বস্তি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর মাধ্যমে সিটি করপোরেশনে সর্ব প্রথম এ উপানুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হয়। নগরীর ১৬-১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২টি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২টি মিলে ৪টি কেন্দ্র নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন শিক্ষিকা বর্ণমালা, সংখ্যাসহ শিশু শ্রেণির মতো পাঠদান করাতেন। কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থী ছিল ৩০ জন। স্থান ভেদে কেন্দ্র ৪টির শিক্ষার্থীর তারতম্য ছিল। এ প্রকল্পের মেয়াদ ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হয়। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘আরবান বেসিক ডেলিভারি প্রকল্প’ নতুন প্রকল্প শুরু হয়। তারা শিক্ষা কার্যক্রমসহ বিলুপ্ত বস্তি উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসূচি নিয়ে আসে। প্রকল্পটি অব্যাহত ছিল ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় স্থানীয় অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্প। দুই মেয়াদে বাস্তবায়ন হয় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল ইএলসিডি (ELCD- Early Learning for Child Development) প্রকল্পে। ইএলসিডি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকাকালেই এ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ব্যয়ে রাসিক অংশগ্রহণ করে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ইএলসিডি প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সার্বিকভাবে রাসিক নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
 
বর্তমান নগরীর ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১১, ১২, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২১, ২৩, ২৪, ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ২০টি কেন্দ্রে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ব্যতীত প্রতিটি কেন্দ্রে শিশু বিকাশ শ্রেণি ও প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি আছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে শুধু শিশু বিকাশ শ্রেণি চালু রাখা হয়েছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১ জন ও অন্যান্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ জন করে মোট ৩৯ জন শিক্ষিকা নিয়মিত পাঠ দান করে থাকেন।

রাসিকের শিক্ষা কর্মকর্তা আনারুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিশু বিকাশ কেন্দ্র ও প্রাক প্রাথমিক মিলে ৩৯টি স্কুল রয়েছে। স্কুলগুলোতে এক হাজার ১৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির কথা; কিন্তু অতিরিক্ত ৩৭ জন শিক্ষার্থী বেশি পড়াশোনা করতে আসে। শিশু বিকাশ কেন্দ্রে পড়াশোনা করে ৬৬৩ জন শিক্ষার্থী। আর প্রাক প্রাথমিকে পড়া-শোনা করে ৫৪৪ জন শিক্ষার্থী। স্কুলগুলোর মধ্যে ভাড়ায় চলা ৯টি। চারটি এক হাজার ও পাঁচটিকে দেড় হাজার করে টাকা দেয় রাসিক।

এছাড়া আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস অ্যান্ড ডেলিভারিতে আরও তিনটি স্কুল। স্কুলগুলো নগরীর ১২, ১৮ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচটি স্কুল পরিচালিত হয়। এগুলো নগরীর ৪, ৯, ১৯, ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে। নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে রেড ক্রিসেন্ট ভবন ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মাদরাসা মিলে আরও দু’টি স্কুল রয়েছে। 

রাসিকের শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিটি মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি এই শিক্ষা কার্যক্রমের উপরে নজর দেন। তার পরে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রাসিকের অর্থায়নে চলতে শুরু করে এই স্কুলগুলো। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক ভালো, দুই-একটি ছাড়া। 
 
ফুদকিপাড়ার স্কুলটিতে জোসনা নামের একজন অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ছোট ঘরে বেশি শিক্ষার্থী হলেও স্কুলে পাঠদানের কৌশল ভালো। তাই শিশুরা স্কুলে আসতে আগ্রহ দেখায়। এখানে গল্প আর খেলতে খেলতে শিশুরা পড়া-শোনা শেখে। এটা অনেক ভালো ব্যবস্থা। 

সিটি মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রাজশাহী শিক্ষা নগরী। শিক্ষা নগরীতে এমন কার্যক্রম স্বাভাবিক বিষয়। এই সব স্কুল দেখে বাইরের মানুষ বুঝতে পারবে এই নগরীর মানুষগুলোর শিক্ষার প্রতি আগ্রহটা কেমন। নগরীতে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে রাসিক সবসময় ছিল, আগামীতেও থাকবে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042250156402588