২৭২ স্কুল ঝুঁকিপূর্ণ: পাঠদান নিষিদ্ধ - দৈনিকশিক্ষা

২৭২ স্কুল ঝুঁকিপূর্ণ: পাঠদান নিষিদ্ধ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি |

পটুয়াখালীর জেলায় ২৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের ভবন ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় এসকল বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থী আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পাঠদান চলছিল। এতে করে শিক্ষক ও অভিভাবকরা মধ্যেও উৎকণ্ঠায় বিরাজ করছিল ।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, জেলায় মোট এক হাজার ২২৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তথ্যমতে জেলার এক হাজার ২২৫ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৭২টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১২৩ টি এবং মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪৯ টি বিদ্যালয়ের ভবন।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০৮টি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ২৩টি। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১১ টি বিদ্যালয়ের ভবন। গলাচিপায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯১টি। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ৬৭টি। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে ৩৬টি। কলাপাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭১টি। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় মোট ৪০টি। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি। রাঙ্গাবালীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭১টি। এই উপজেলায় মোট ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বাউফল উপজেলায় মোট বিদ্যালয় ২৯৩টি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ২৯টি। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় নয়টি। মির্জাগঞ্জে বিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ১৪২টি। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ১৯টি। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি বিদ্যালয় ভবন। দশমিনা উপজেলায় ১৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ৫১টি। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৭টি।

এদিকে ৬ এপ্রিল পার্শ্ববর্তী জেলা বরগুনায় তালতলীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদের বিম ধসে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনার পর পটুয়াখালী ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়। এই অবস্থায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়াও নতুন করে বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

সম্প্রতি সরেজমিনে সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ১৩৬ নং দক্ষিন তেলিখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় জরাজীর্ণ ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের পাশের একটি টিনের ঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত এই স্কুলের দুই কক্ষের একতলা ভবন দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহারে অনুপযোগিহয়ে পরেছে। ছাদের পলেস্তরা খসে পরছে। শির্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর স্কুলের পাশে টিনসেডের একটি ঘর নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্কুলটি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় নাম উঠেছে।

স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র রাতুল ইসলাম জানায়, স্কুলের ছাদের পলেস্তরা খসে খসে পরছে। অনেক সময় তাদের গায়েও পরে পলেস্তরা। বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুইয়ে পানি পরে। একই শ্রেণির রাহিমা বলে, স্কুলে লেখাপড়ার সময় তাদের দৃষ্টি থাকে মাথার উপর ছাদের দিকে। কখন ভেঙে পরে এই আতঙ্কে থাকার ফলে লেখাপড়া বিঘ্ন হয় তাদের।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল জলিল জানান, স্কুলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান বিরত রাখতে নির্দেশা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে স্কুল ভবনের পাশে স্কুলেরই টিনসেড ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ১৩৮নং পশ্চিম গাবুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের একতলা ভবনটি একটি কক্ষের ছাদ ভেঙে পড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দরজা-জানালা বিধ্বস্ত, ভিম ফেটে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষকা জুলেখা আক্তার জানায়, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল। চারটি কক্ষের এই স্কুলটি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকারিকরণ করা হয়। তিন বছর আগে স্কুল ভবন ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পরে। স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম বিকল্প স্থানে চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হওয়ার পর স্কুলের পাশেই শিশু শিক্ষার্থীর জন্য টিনের ঘর তুলে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে বাউফল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিয়াদুল হক বলেন, উপজেলায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার বিদ্যালয় মধ্যে ৯টি বিদ্যালয় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করতে প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন করে বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এসেছে। ১৫ দিনের মধ্যে তালিকা তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039961338043213