৩০০ টাকা বেতন বকেয়া, রিক্সাওয়ালার ছেলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল স্থগিত! - দৈনিকশিক্ষা

৩০০ টাকা বেতন বকেয়া, রিক্সাওয়ালার ছেলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল স্থগিত!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মুনতাসিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা রিক্সাচালক। বেতন বকেয়া থাকায় মুনতাসিনসহ বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।  ফল স্থগিত রাখার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপর। ফল স্থগিত রাখা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিয়েও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।

মুনতাসের বাবা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, তিনি একজন রিকশা চালক। ছেলের স্কুলের পুরো বছরের বেতন দিলেও বছর শেষে মাত্র ৩০০ টাকা বেতন বকেয়া থাকায় বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে। এখন ছেলে কি পাস করেছে, না কি ফেল করেছে জানি না। ছেলের ভবিষ্যত লেখাপড়া নিয়েও ভয়ে আছি।

নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার ২০০ টাকা বকেয়ার জন্য বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছিল। পরে টাকা পরিশোধ করে আমি দেখি মেধাতালিকায় ১২তম স্থানে উত্তীর্ণ হয়েছি। একইভাবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ আরেক শিক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে। সেও বেতন পরিশোধের পর দেখে মেধাতালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। এভাবে আরও অনেকের ফলাফল স্থগিত যাদের কয়েকজন বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্যও আছে। হাবিবুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারিতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। বেতন বকেয়া হলে ফলাফল কখনো স্থগিত থাকতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীদের মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। অভিভাবকের দারিদ্রতা তো তার অপরাধ না। আর বেতন বকেয়া থাকলে পরীক্ষার আগেই গার্জিয়ান ডেকে জানানো উচিৎ ছিল। বছর শেষে এভাবে তার মনের ওপর চাপ দেয়ার মানে কী? তারা শিক্ষক হয়েও কি বোঝে না এমন করলে বাচ্চাদের মনোভাব কেমন হবে। এখন যাদের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে, তারা মানিসকভাবে মুষড়ে পড়েছেন।

ফরহাদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল আলম এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, এটা মাধ্যমিক বেসরকারি স্কুল, এমপিওভুক্ত। এখানে অনেক ছেলে মেয়ে বাড়ি থেকে টাকা এনে খেয়ে ফেলে। স্কুলের বেতন দেয় না। এখন একটু পরীক্ষা করে দেখি ছেলেরা কি আসলেই টাকা খেয়ে ফেলেছে, না গার্জিয়ান দেয়নি। যাদের বেতন বাকি থাকে তাদের ফলাফল রেখে দিয়ে দেখছি। পরীক্ষা তো আমরা নিয়ে ফেলেছি। গার্জিয়ান আসলে কিন্তু ছেড়েও দিচ্ছি। তাদের বইও দিয়েছি।

তবে অন্যকথা বলছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপিত অধ্যাপক মঈনুদ্দীন। তিনি বলেন, স্থগিত বলতে যাদের টাকা-পয়সা বাকি আছে সে টাকাগুলো আদায় তো করতে হবে। স্কুল তো চালাতে হবে। পয়সাগুলো দিলেই তো তাদের নাম উঠে যাবে বা অনেকে ফেলও করতে পারে। এগুলোকে স্থগিত বলা যায় না, এগুলো স্থগিত না। অভিভাবকরা অভিযোগ করলে তো হবে না।

তিনি বলেন, অভিযোগ করেছে আমাকে নামটা বলেন? কি জন্য করছে আপনারা ইনকোয়ারি করেন। এখানে দুই নাম্বারির কোনো কাম নাই।

উল্লেখ্য, স্কুলটি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির ভয়ে অনেক অভিভাবকই মুখ খুলতে চান  না। 

হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, বছর শেষ, সব বাচ্চারা ফলাফল পাবে। এই আগ্রহের জায়গায় ধাক্কা খেলে তো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মুষড়ে পড়বেই। বিষয়টা আসলে আমার জানা ছিল না। অভিভাবকদের ডেকে আমি কথা বলবো।

তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক চাইলে আলোচনা করতে পারতেন আমার সাথে। স্কুলের একটা বদনা চুরি হলেও তারা ইউএনওকে জানায়। এক্ষেত্রে কেন জানায়নি তা জানি না। তাহলে সমাধান বের করা যেত। তাছাড়া বছর শেষে ফলাফল পাওয়াটা আনন্দের ব্যাপার। আমি যদি আরো আগে জানতে পারতাম ফলাফল দেয়ার ব্যাপারে বিকল্প কিছু বের করতে পারতাম। 

মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের  কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন,  বেতন বকেয়া থাকলে ফল স্থগিত রাখার সুযোগ নেই। এ ধরণের কোনো নিয়ম বা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা নেই। 

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0088450908660889