‘সংসার চলে না, বাধ্য হয়ে কোচিং চালু রেখেছি’ - দৈনিকশিক্ষা

‘সংসার চলে না, বাধ্য হয়ে কোচিং চালু রেখেছি’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

ময়মনসিংহে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোচিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তাছাড়াও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ কোচিং করায় তবে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক ১০ জনকে নিজের বাসায় বা শিক্ষার্থীর বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। সেই নিয়ম ও মানছেন না শিক্ষকরা। 

শহরের প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুলের গণিতের শিক্ষক এনামউল্লাহ বলেন, স্কুল থেকে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে কোচিং চালু রেখেছি। প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেব, কোচিং ছাড়তে পারব না। তিনি প্রতি ব্যাচে ২৫ থেকে ৩০ জন করে দৈনিক আট থেকে ১০টি ব্যাচে কোচিং করান বলে জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ‘কোচিং পাড়া’ হিসেবে পরিচিত বাউন্ডারি রোড, নাহা রোড, নতুন বাজার, কালিবাড়ি, গোলকি বাড়ি ও জিলা স্কুল রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বহু কোচিং সেন্টার। এসবের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক। 

শহরের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক আনোয়ার কাদের রতন তাদেরই একজন। তিনি বলেন, আমি সরকারের নিয়ম মেনে বাসায় প্রাইভেট পড়াচ্ছি। এটা কোনো কোচিং নয়। আনোয়ার কাদেরকে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে পড়াতে দেখা গেছে। দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আনোয়ার প্রতিদিন আট থেকে দশটি ব্যাচ পড়ান। প্রতিটি ব্যাচে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী পড়ে।

আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে সরকারি নির্দেশনার আগে আনোয়ার বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং করাতেন। এখন নিজের বাসায় কোচিং করান। সকাল-বিকাল তিনি তার নিজের প্রতিষ্ঠান ও জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি ব্যাচ পড়ান।  শিক্ষার্থীরা আরও জানান, আগে আনোয়ার কাদের প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে নিলেও এখন তিন হাজার টাকা করে নেন। 

জিলা স্কুলের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক আশরাফুল হক ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ মকবুল হোসেন, কাশিগঞ্জ কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তোফায়েল আহমেদ সবুজ, আফরোজ খান মডেল স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক মাহবুব হোসেন, মুসলিম গার্লস স্কুলের গণিতের শিক্ষক বাবুল হোসেন ও জালাল উদ্দিন, প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক রিপন কুমার দাস এবং আশরাফুজ্জামান, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের বিজ্ঞানের প্রভাষক সুব্রতসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত বলে জানা গেছে।

জিলা স্কুলের পাশে রয়েছে ‘রতন'স ক্রিয়েটিভ সায়েন্স কোচিং সেন্টার’। এর পরিচালক ও ফুলবাড়িয়া কলেজের জীব বিজ্ঞানের প্রভাষক হাসান মতিউর রহমান রতন। এই কোচিং সেন্টারে শতাধিক শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে শিক্ষক মতিউর রহমান রতন বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগেই দুই মাসের টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। তাই দুই মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং বন্ধ করা যাবে না।

জিলা স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক আশরাফুল হক ভূঁইয়া জানান তিনি অভিভাবকের চাপে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের চাপে ৮-১০ জন করে প্রাইভেট পড়াচ্ছি। সামান্য বেতনে জীবন চলে না। সরকার চাইলে তাও বন্ধ করে দেব। 

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক রাজিয়া সুলতানা, সোহেল হায়দার ও নজরুল ইসলাম জানান, সন্তানদের পড়াশোনার কথা বিবেচনা করে তারা কোচিং সেন্টারে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কোচিং না করালে তারাও স্বস্তি পাবেন বলে জানান। রাজিয়া সুলতানা বলেন, তাহলে আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আর কেউ পড়াবে কেউ পড়াবে না তাহলে ত সমস্যা থেকেই যাবে।

জেলা জজ আদালতের আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, শিক্ষাখাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা প্রত্যেক শিক্ষকের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। শিক্ষকরা নির্দেশনা অমান্য করলে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাইনি।

এ বিষয়ে জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহসিনা খাতুন বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক আগে কোচিং করাতেন। কোচিং বন্ধে সরকারের নির্দেশনার পর থেকে আমার জানামতে কোনো শিক্ষক কোচিং করান না। তবে কেউ যদি কোচিং করান তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক দিল খুরশীদ জামানও একই কথা বলেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু শিক্ষক নিয়ম অমান্য করে কোচিং ও প্রাইভেট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শুনেছি। আমরা তাদের তালিকা তৈরি করছি। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপ-পরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়ালে তার দায়দায়িত্ব তাদেরই বহন করতে হবে। আমরা কাউকেই ছাড় দেব না। শিগগিরই তাদের শনাক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003242015838623