সরকারিকৃত কলেজের কমিটি নিয়ে মুখোমুখি মন্ত্রণালয়-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় - দৈনিকশিক্ষা

সরকারিকৃত কলেজের কমিটি নিয়ে মুখোমুখি মন্ত্রণালয়-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

মুরাদ মজুমদার |

আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী গত কয়েক বছরে সরকারিকৃত তিনশতাধিক কলেজের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত হয়েছে। এ কলেজগুলোর আর্থিক কার্যাবলি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে ডিসি-ইউএনও এবং অধ্যক্ষদের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে। কিন্তু হঠাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা আত্তীকরণ বিধিমালার মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সরকারিকৃত কলেজগুলোকে অ্যাডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

তবে সরকারিকৃত কলেজগুলোর শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উল্টোপথে অ্যাডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরকারিকৃত কলেজগুলোতে বেসরকারি আমলের মত স্থানীয় প্রভাবশালীদের অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। তাই কমিটি গঠনের এ নির্দেশনা প্রত্যাহার চেয়েছেন তারা। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমন সাংঘর্ষিক নির্দেশনা দিতে থাকলে সরকারিকৃত কলেজগুলো সরকারি সাত কলেজের মত অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নেবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন শিক্ষক নেতারা।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে ২৭১টি কলেজ সরকারিকরণের পর কলেজগুলোর পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে সে বছরের ২৭ আগস্ট আদেশ জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। এতে বলা হয়েছিল, সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা-২০১৮ এর আলোকে কলেজগুলো সরকারি করা হয়েছে বিধায় সরকারিকৃত কলেজের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত হবে। কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের আত্তীকৃত না হওয়া পর্যন্ত কলেজের আর্থিক বিষয় জেলা সদরের কলেজগুলোর ডিসি ও অধ্যক্ষ এবং উপজেলা পর্যায়ের কলেজগুলো ইউএনও ও অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে। 

কিন্তু হঠাৎই গত ২ জানুয়ারি সরকারিকৃত কলেজগুলোতে অ্যাডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে অধ্যক্ষদের চিঠি পাঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে সরকারিকৃত ও তার পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত যেসব বলেজ সরকারিকরণ হয়েছে, সেসব কলেজের গভর্নিং বডি গঠন সংক্রান্ত (সংশোধিত) সংবিধি-২০১৯ এর ধারা ৪ (ক) মোতাবেক ‘প্রত্যেক অধিভুক্ত কলেজ (সরকারি-বেসরকারি) নিয়মিতভাবে গঠিত একটি গভর্নিং বডি দ্বারা পরিচালিত হবে’। তাই কলেজে অ্যাডহক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে একই সংবিধির ধারা ৬ (ক) অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটির প্রস্তাব ইমেইলে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।
 
চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমাদের সংবিধিতে আছে কলেজগুলো গভর্নিং বডি দ্বারা পরিচালিত হবে। এ জন্য আমরা কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছি। 

আত্তীকরণ বিধিমালা এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কলেজগুলোর কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে, তবুও কেন এ নির্দেশনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধিতে গভর্নিং বডি গঠনের নির্দেশনা আছে তাই আমরা কমিটি গঠনের জন্য বলেছি। 

জানা গেছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে সারাদেশের ২৭১টি কলেজ সরকারি করা হয়। এর পর আরও বেশ কয়েকটি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সরকারিকৃত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অভিযোগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে বিধি অর্থাৎ ‘কলেজের গভর্নিং বডি গঠন সংক্রান্ত (সংশোধিত) সংবিধি-২০১৯’ অনুযায়ী কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে, তা কলেজ সরকারিকরণের পর জারি করা। তাই বুঝতে পারা যাচ্ছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরকারিকৃত কলেজগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আধিপত্য পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে। কলেজ সরকারিকরণের প্রায় আড়াই বছর পর এ ধরণের নির্দেশনাকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন সরকারিকৃত কলেজগুলোর শিক্ষকরা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারিকৃত কলেজের একজন শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মূলত কলেজগুলো আত্তীকরণের কাজ প্রভাবিত করতে আর কলেজের সরকারি হয়ে যাওয়া সম্পদ ভোগদখল করতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও আমলাদের অনেকের আগ্রহ থাকে। তারাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তদবির করে এমন ষড়যন্ত্রমূলক সংবিধি ও নির্দেশনা জারি করিয়েছে। কলেজগুলো এখন ডিসি ইউএনওদের স্বাক্ষরে একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি কলেজও একইভাবে পরিচালিত হয়। কিন্তু সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষকদের ওপর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ করে দিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনটা হলে আমরা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে চাই। 

এ বিষয়ে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) সভাপতি জহুরুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সরকারিকৃত প্রতিষ্ঠানের ওপর এমন সাংঘর্ষিক ও ষড়যন্ত্রমূলক নির্দেশনা দিলে আমরা কলেজগুলো অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে চাই। সরকারিকৃত কলেজগুলোতে ডিসি ও ইএনওদের যৌথ স্বাক্ষরের আর্থিক ও একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটি ঢাকার সরকারি সাত কলেজের মত অধিভুক্তির বিশেষ কোন ইঙ্গিত বহন করে কি না তা দেখার বিষয়। আমি সরকারিকৃত কলেজের অধ্যক্ষদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি অনুসরণ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের (বাসকশিপ) সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মৃধা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারিকৃত কলেজে অ্যাডহক কমিটি নিয়ে যে চিঠিটি দিয়েছে সেটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা এর নিন্দা জানাই।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039060115814209