অনলাইনে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে ভুয়া ডিগ্রি - দৈনিকশিক্ষা

অনলাইনে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে ভুয়া ডিগ্রি

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি। এতে করে এখন ঘরে বসেই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পড়ালেখা করে এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশি-বিদেশি অনেক সার্টিফিকেট অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। করোনাকালে গত দেড় বছরে অনেক কিছু বন্ধ থাকায় এবং বিদেশে যাওয়ার সুযোগ কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জনের আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু সেই সুযোগে প্রতারকচক্রও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অনলাইনে নামকাওয়াস্তে প্রশিক্ষণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই টাকার বিনিময়ে তারা বিক্রি করছে ভুয়া ডিগ্রি। তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষরাই এসব সুযোগ বেশি নিচ্ছেন। বুধবার (৪ আগস্ট) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

 আগে থেকেই শত শত ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় আছে অনলাইনে; যারা স্বল্প মূল্যে ভুয়া সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি বিক্রি করে। এমডি, পিএইচডি, এমবিবিএস, এমফিল, মাস্টার্স, অনার্সসহ যে ধরনের ডিগ্রিই চাওয়া হয়, তা তারা পৌঁছে দেয় ক্রেতার দোরগোড়ায়। ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় তত দিন পর্যন্ত তাদের কাজ চালিয়ে যায়, যত দিন পর্যন্ত না ধরা পড়ছে। ধরা পড়লেই নাম বদলে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসে। তাদের কোনো জায়গাজমি, অনুমতি বা শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু একটি ওয়েবসাইটের।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

অনেক ভুয়া স্টাডি সেন্টার ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে জাল ডিগ্রি বিক্রি করছে। অথচ তাদের সঙ্গে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্কই নেই।

ভুয়া ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট নিয়ে অনেকেই পড়ছেন বড় বিপদে, খোয়া গেছে অর্থ ও সম্মান।

গত রবিবার ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করা চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতা ধরা পড়েন র‌্যাব-৪-এর হাতে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইন্সপিরেশনাল উইমেন অ্যাওয়ার্ড, বছরের সেরা নারী বিজ্ঞানী, আরব আমিরাত থেকে রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ভারতের টেস্ট জেম অ্যাওয়ার্ড, থাইল্যান্ডের আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড রিসার্চার অ্যাওয়ার্ডসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন বলে প্রচার করতেন। কিন্তু এর সবই ভুয়া। সব সনদ নিজেই তৈরি করেছেন।

তবে ঈশিতা পেশায় চিকিৎসক। তিনি ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ২০১৩ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ঈশিতা করোনা মহামারিকে পুঁজি করে ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় সক্রিয় ছিলেন। এসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচক ও প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি অনলাইনে করোনা প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন এবং সার্টিফিকেট প্রদান করে প্রচার করেছেন। ঈশিতা ‘ইয়াং ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফর হিউম্যানিটি’ নামে একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশ ও আন্তর্জাতিক মণ্ডলে প্রতারণার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন বলে জানা যায়।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘যিনি ডিগ্রি গ্রহণ করবেন তাঁকে তো সতর্ক থাকতেই হবে। তবে এর চেয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত রাষ্ট্রের। কারণ অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান অর্থের লেনদেন করছে। তারা যদি ভুয়া ডিগ্রি দেয়, তাহলে তারা কিভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে? যেহেতু অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি পাওয়া যায় না। তাই তাদের সঙ্গে যেকোনো কাজ করতে গেলে অবশ্যই জেনে-বুঝে, খোঁজখবর নিয়ে এগোতে হবে।’

জানা যায়, অস্তিত্বহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ‘আমেরিকান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউএসএ’ নামে রাজধানীতে ভুয়া স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করছে লিংকনস হায়ার অ্যাডুকেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামের দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান। ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমপিএইচ, এমবিএ, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয় তারা। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাস্টার্স প্রগ্রামের জন্য পাঁচ হাজার ১০০ এবং পিএইচডি প্রগ্রামের জন্য ১০ হাজার ৬০০ ডলার নিচ্ছে।

ইউজিসি জানিয়েছে, আমেরিকান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইউএসএর ওয়েবসাইটটি ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নওগাঁ জেলা থেকে খোলা হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত একটি ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে।

‘লন্ডন স্কুল অব কমার্স ঢাকা (এলএসসি)’ নামে রাজধানীতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনবিহীন একটি স্টাডি সেন্টার চলছে। অনুমোদন ছাড়াই ডিপ্লোমা, স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি দিচ্ছে সেন্টারটি। যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব কমার্সের নাম ব্যবহার করেছে তারা। ইউজিসি বলছে, এ স্টাডি সেন্টারটি পরিচালনায় সরকার ও কমিশনের অনুমোদন নেই।

চলতি বছরের শুরুতে সৈয়দপুরে অস্তিত্বহীন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সতর্কবার্তা জারি করে ইউজিসি। এরপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ওই ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়।

সম্প্রতি দেশে মোনাশ কলেজের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তারা ইউজিসি থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমতি না নিয়েই কার্যক্রম শুরু করেছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানিয়েছে ইউজিসি। 

জানা যায়, দেশের আইন অনুসারে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার এখতিয়ার বা সুযোগ নেই। যদিও নামে-বেনামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টার খুলে দেদার বিক্রি হচ্ছে পিএইচডি সনদ। অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি সনদের গ্রাহকদের বড় অংশই সরকারি চাকুরে। অনেক রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরাও ভুয়া পিএইচডি ব্যবহার করেন।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘ভুয়া স্টাডি সেন্টারের ব্যাপারে আমরা কমিটি করেছিলাম। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে শিগগিরই আমরা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব। বাংলাদেশে চাকরির ক্ষেত্রে এসব সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদেরও অনুরোধ করব, জেনে-বুঝে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বা সার্টিফিকেট গ্রহণ করার জন্য। এমনকি এখন পর্যন্ত বিদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেয়নি ইউজিসি।’

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047061443328857