অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখে সহপাঠীদের কান্না - দৈনিকশিক্ষা

অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখে সহপাঠীদের কান্না

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি |

উপরে ত্রিপল টাঙানো, এর নিচে যেন শরণার্থী শিবিরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এর মাঝ থেকেই জরুরি রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটছে অ্যাম্বুলেন্স। এই রোগীরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনরত শিক্ষার্থী। চারদিন ধরে অনশন করে অসুস্থ হয়ে তাদের অধিকাংশ এখন হাসপাতালে ভর্তি। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শিক্ষার্থীদের অনশন না ভাঙলে শারীরিক অবস্থা আরও বেশি খারাপ হওয়ায় আশঙ্কা আছে এমনটা জানালেও কেউ ভাঙেননি। এরমধ্যে আবার গণঅনশনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার জান্নাতুল নাইম নিশাত নামে অনশনরত এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানান। জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠাতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তখন বলেন ‘আমি হাসপাতালে যাব না, আমি তো আমরণ অনশন করতে এসেছি। হাসপাতালে কেন যাব, আন্দোলনে এসেছি না?’

এর পর থেকে নিশাত হাসপাতালে। এখনও তিনি অনশনরত থাকায় তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।

নিশাতের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান প্রোমি চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েছি। তার অবস্থা দেখে সবার কান্না আসছে, কিন্তু তাকে কিছু খাওয়াতে পারছি না। তার নিকট আত্মীয় যারা, তারাও বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু কেউ কিছু খাওয়াতে পারছেন না। সে বারবার আমাদের বলেছে, দাবি না মানা পর্যন্ত আমি কিছু খাব না। অথচ চিকিৎসক বলছেন, তার শরীরের ভেন খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চললে সে কোমায় চলে যেতে পারে।’

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ৯২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের ১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনশনে অংশ নেওয়া মেয়ে শিক্ষার্থীরা সবাই এখন হাসপাতালে। ক্যাম্পাসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবার জন্য নিয়োজিত মেডিকেল টিমের সদস্য মোস্তাফিজ রহমান বলেন, ‘মেয়েরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এদের দ্রুত খাবার না খাওয়ালে শারীরিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। কারও কারও ডায়াবেটিসের সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে এসে শাবি শিক্ষার্থী অরুণ কুমার চাকি বলেন, ‘আমি কারও মুখের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছি না। যদি আমাকে বলে ভাই খুব কষ্ট হচ্ছে।’ এই বলে তিনি চোখের পানি মুছতে থাকেন। অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হাসিব রহমান বলেন, ‘আমি এদিকে এলে তাদের দিকে তাকাতে সাহস পাই না। তাদের ওই চেহারা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।’

চিকিৎসা নিয়ে একটু স্বাভাবিক বোধ করায় আবারও অনশনে ফিরেছেন চার শিক্ষার্থী। তারা হলেন, শাহরিয়ার আবেদিন, কাজল দাস, আব্দুল্লাহ আর রাফি এবং আরেকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। বাকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জন এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, দুইজন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দুইজন মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার দুপুর দুইটা ৫০ মিনিটের দিকে প্রতীকী লাশ নিয়ে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখন হয় তো আমরা প্রতীকী অবস্থান নিয়েছি, কিন্তু এভাবে চললে হয় তো আমাদের কাউকে সত্যি সত্যি কাফনের কাপড় পরতে হবে।’ প্রতীকী লাশ নিয়ে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে অবস্থান নিয়ে লাশ মাঝে রেখে গোল হয়ে বসে নীরবতা পালন করেন। এরপর আবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করা হয়। এরমধ্যেই রাত ৮টা থেকে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা। প্রাথমিকভাবে আরও তিন শিক্ষার্থী গণঅনশনে যোগ দিয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের এই অবস্থা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আমি অনুরোধ করে বলব জীবন বিসর্জন দিয়ে ভিসি অপসরণের প্রয়োজন নেই। এখন তাদের জীবন বাঁচাতে শাবির সব পক্ষের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীর সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত একটা সমাধান কামনা করছি এবং এই পরিস্থিতির জন্য দোষী কেউ থাকলে তার শাস্তি হোক।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে শাবির শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল। মধ্যরাতে ভার্চুয়ালি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেন মন্ত্রী। কোনো সমাধান আসেনি এখনও। রোববারও এ বিষয়ে আরও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী বারবার অনশন ভাঙার কথা বললেও সময় চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা এবং তাদের দাবিতে অনেকটা অনড় তারা। আলোচনার পাশাপাশি অনশন চালিয়ে যাবেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মোহাইমিনুল বাশার বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী অনশন ভেঙে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার কথা বলেন। তখন আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সময় চাই। পরে আমরা অন্যান্য অনশনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা অনশন ভাঙতে রাজি নয়। সে ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দাবিতে অনড় থাকব এবং রোববার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এ দাবি নিয়েই আলোচনা হবে।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.028137922286987