অপসংস্কৃতি রোধে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি - Dainikshiksha

অপসংস্কৃতি রোধে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

মো. রহমত উল্লাহ্ |

c8114260-6d5f-4c38-b5c7-0127ec9e910aবাংলাভাষার উপর ভিত্তি করেই আমরা বাঙালি। এর মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি আমাদের আত্মপরিচয়, নিজস্ব সাহিত্য, মরমী সুর, চালচলন, পোশাক আশাক, প্রতিবাদের ভাষা, প্রতিরোধের শক্তি-সাহস আর আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। আমাদের বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য যারা অন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি গভীরশ্রদ্ধা।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা আজ ভুলতে বসেছি আমাদের ভাষার সঠিক ব্যবহার। তাই হারাতে বসেছি আমাদের অতীত ঐতিহ্য। ইচ্ছে করে, ন্যাকামি করে, আধুনিকতা করে বিকৃত করছি মায়ের ভাষার উচ্চারণ। পরিধান করছি ভিনদেশিদের পোশাক। চুল কাটছি উদ্ভট করে। বিদেশী গান গাইছি ও শুনছি আঁকাবাঁকা হয়ে। বাংলা গানের কথায় জুড়ে চিচ্ছি ইংরেজি গানের সুর। এইসব বিকৃত আধুনিকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন একশ্রেণির ন্যায়নীতিহীন অভিভাবকএবং এসব প্রচার করছে কিছু ন্যায়নীতি হীন রেডিও-টেলিভিশন আর ওপেন কনসার্ট।

মহান ভাষা দিবস সহ সকল জাতীয় দিবসের আগের রাতে রাজধানীসহ বড়ছোট অনেক শহরে, কিছু কিছু উপ শহরে, এমনকি কোন কোন মফস্বল এলাকায় ওপেন বাজানো হচ্ছে বিকট শব্দে বিদেশি বাদ্যযন্ত্র, আর সেই সাথে মাদকদ্রব্য খেয়ে-খায়িয়ে,উলঙ্গ নেচে-নাচিয়ে, গাওয়া হচ্ছে যৌন উদ্দীপক ইংরেজি ও হিন্দি গান। হারাম করে দেওয়া হচ্ছে এলাকা বাসীর সারা রাতের ঘুম।এরচেয়ে বেশি করা হচ্ছেগায়ে হলুদে, বিয়েতে, জন্মদিনে, মুসলমানিতে, ঈদে,পুজায়, বড়দিনে, ইংরেজি নববর্ষে, এমনকি বাংলা নববর্ষেও।অথচ এসবের প্রতিবাদ করার শক্তি সাহস, মন মানসিকতা যেনো আজ আর অবশিষ্ট নেই কারোর মাঝেই। মনে হচ্ছে, যেখানে-সেখানে, যখন-তখন তাদের এসব অশান্তি করার অধিকার আছে; কিন্তু আমাদের নিজের ঘরে শান্তিতে ইবাদত করার, লেখাপড়া করার,ঘুমিয়ে থাকার কোন অধিকার নাই। এসবে সমর্থন দিচ্ছে এলাকার প্রভাবশালীরা। ভোটের আশায় অর্থ যোগান দিচ্ছে নেতারা আর অংশ নিচ্ছে কর্মীরা। দেখেও না দেখার ভান করছে পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসন। কিন্তু কেন?

অন্যদিকে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন উপলক্ষে করাহচ্ছে চরম অশালীন বিদেশি নাচ-গানের আয়োজন। ব্যয় করা হচ্ছে অভিভাবকদের নিকট থেকে আদায় করা অর্থ। অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও শিক্ষকগণ বাধ্য হচ্ছেন এমন আয়োজন করতে।এসব যেনো খেয়ালই করছেনা আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেবিদেশি নাচ-গান বাদ্য-বাজনা নিষিদ্ধ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশই যথেষ্ট। কিন্তু এতদিনেও তা হচ্ছেনা কেনো?

এতো গেলো বাইরের কথা। কী হচ্ছে ঘরে ঘরে? কী দেখা হচ্ছে টিভিতে? সারা বছর চলছে হিন্দি সিরিয়াল। অধিকাং বাসা বাড়ির টিভির রিমোট বড়দের হাতেবিশেষ করে গৃহকর্ত্রীর হাতে থাকে বিধায় ছোটরাও দেখতে বাধ্য হচ্ছে বড়দের কূটচালে ভরা হিন্দি সিরিয়াল। তাই তারা বেড়ে উঠতে বাধ্য হচ্ছেবিকৃত রুচি ও মানসিকতা নিয়ে। এই সিরিয়াল পাগলরা এমনই পাগল যে, শহিদ দিবসে, স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে, ঈদের দিনে, পূজার দিনে,পহেলা বৈশাখে, এমনকি শোকের দিনেও দেখেননা বাংলাদেশের অনুষ্ঠান। ফলে ছোটরাও দেখতে পারেনা আমাদের বাংলা অনুষ্ঠান। শুনতে পারেনা আমাদের গুণীজনদের কথা। জানতে পারেনা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সেদিনেও তাদের মাঠায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ভিনদেশি সংস্কৃতি।

আশির দশকে এমন একটা সময় ছিল, যখন এসব হিন্দি চ্যানেল আমাদের টিভিতে দেখা যেতোনা। আমাদের এত টিভি চ্যানেলও ছিলোনা।তখন সবাই বিটিভি’র অনুষ্ঠানই দেখতে বাধ্য ছিলো। আর তখন ছিল আমাদের ইতিহাস বিকৃত ও ঐতিহ্য ধংস করার যুগ।চির বিজয়ী বীর বাঙালি জাতিকেবিভক্ত করে ভীতু বাংলাদেশী বানানোর যুগ।তখন সঠিক ইতিহাস প্রচার করা হতোনা আমাদের টিভিতে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ভুলটাই দেখতাম ও শিখতাম। বিভ্রান্ত হতাম। বিভক্ত হতাম। সেই সময়ের বিভ্রান্ত যুবক-যুবতী ও ছেলে-মেয়েরাই এখনকার বেশির ভাগ দাদা-দাদি, নানা-নানি, মা-বাবা, চাচা-মামা,ফুফু-খালা,শিক্ষক শিক্ষিকা। তাদের হাতেই এখন টিভি’র রিমোট। তারাই পছন্দ করেনা বাংলাদেশের অনুষ্ঠান। তারাই পাগল হিন্দি সিরিয়াল দেখার জন্য।

অথচ এখন যখন আমাদের অনেক টিভি চ্যানেল। এখন যখন আমাদের অধিকাংশ টিভিতে আমাদের সঠিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য কম বেশি প্রচারিত হচ্ছে; তখন আমাদের উপর ঝেঁকে বসেছে বিদেশি চ্যানেল। অর্থাৎ আমাদের ছেলে মেয়েরা আগে শিখেছে ভুল ইতিহাস আর এখন শিখছে ভিন্ন কালচার।

এমতাবস্থায় দাবি উঠেছে, কয়েকটি বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করার। মতামত রয়েছে এই দাবির পক্ষে বিপক্ষে। সেটি হলে ভালো। না হলে,কমপক্ষে আমাদের শহিদ দিবসে, স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে, শোক দিবসে, পহেলা বৈশাখে বন্ধ রাখা হোক সকল বিদেশি চ্যানেল এবং বিদেশি নাচ-গান ও বাদ্য-বাজনার ওপেন কসার্ট। যাতে অন্তত এই এক’টা দিন আমাদের সন্তানেরা দেখতে পারে আমাদের চেহারা, শুনতে পারে আমাদের কথা, জানতে পারে আমাদের অতীত, জাগ্রত করতে পারে জাতীয় চেতনা, বর্ধিত করতে পারে দেশপ্রেম, তৈরি করতে পারে সুরুচি, রচনা করতে পারে সঠিক ভবিষ্যৎ।

লেখক: শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

 

 

 

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006417989730835