পাহাড় সমান এমপিও দুর্নীতি, অদক্ষতা ও সর্বত্র জামাতীকরণের অভিযোগে অধ্যাপক মো: এলিয়াছ হোসাইনকে হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এখবর জানা যায়।
অনলাইন, এমপিওভুক্তি, আইসিটিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামান্যতম ধারণা না থাকা সরকারি কলেজের অধ্যাপক এলিয়াছকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক পদে বদলিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে মাগুরার সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে হঠাৎ বদলি হয়ে অধিদপ্তরে আসার পর নজিরবিহীনভাবে তিনি নিজের লেখা গাইড বই বিক্রি শুরু করেন অধিদপ্তরের নিজ কক্ষে বসেই। দৈনিকশিক্ষাডটকম পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে শিক্ষামন্ত্রী রুষ্ট হন এলিয়াছের ওপর। মন্ত্রীকে জানানো হয় ওগুলো গাইড বই নয় সহায়ক বই্। মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় মন্ত্রী দৈনিকশিক্ষার প্রতিবেদন সবাইকে দেখান। এলিয়াছের অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতির একাংশের নেতাদের তদবিরে এলিয়াছ রেহাই পান বদলি থেকে।
কতিপয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক হয়েও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা একটি চক্রের কোটি কোটি টাকা নিয়ে প্রস্তুতি ছাড়াই অনলাইনে এমপিও চালু করার অভিযোগের তীরও এলিয়াছের দিকে। সিনোসিস আইটি নামক একটি ফার্মের মাধ্যমে এমপিও খাত থেকে সরকারের কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার অভিযোগ এলিয়াছের বিরুদ্ধে। অনলাইনে এমপিও চালু হওয়ার পর ঘুষ ও হয়রানি উভয়ই বেড়েছে। সারাদেশ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেলেও এলিয়াছের সাফ কথা ‘দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই, সব হয় সফটওয়ারে।” ইএমআইএস সেলে জামাতপন্থীদের বদলি করে আনার অভিযোগ এলিয়াছের বিরুদ্ধে।
ঢাকা, যশোর, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ভালো পদে জামাতপন্থী শিক্ষকদের বদলি করে আনার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক বলেন, প্রতি বিজোড় মাসে এমপিওভুক্তির সভা বসে অধিদপ্তরে। কিন্তু কোন পদের জন্য কাদেরকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে তার কোনো বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা হতো না গত এক বছর যাবত। এতে গোঁজামিল দেয়ার সুযোগ থাকতো। প্রতিটি এমপিওর সভায় মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান এমপিওর দুর্নীতি ও ভোগান্তির তথ্য সম্বলিত দৈনিকশিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরতেন।
পরিচালক বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলতেও মাঠ পর্যায়ের দুর্নীতির অভিযোগের কথা। কিন্তু একমাত্র এলিয়াছ ও উপ-পরিচালক মো: মোস্তফা কামাল বলতেন ‘অনলাইন এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।” এরপর দৈনিকশিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখানো হলে এলিয়াছ বলতেন ‘সরি স্যার ওটা ভুলক্রমে হয়ে গেছে। দুর্নীতি না।”
দৈনিক সমকালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অফিস ফেলে রেখে জামাতনেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের নামাজে জানায়ায় অংশ নেন এলিয়াছ।
তিনি বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করে হেরেছিলেন পাঁচ বছর আগে।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষক ফোরামের নেতা আবুল হোসেন বলেন, ৩০ বছর আগের মেজর এনাম কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী অধিদপ্তরের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ ও স্কুল শিক্ষকদের বসানো হয়। ওই বিধান বাতিল করে শতকরা ৯৮ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেশ বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক, উপপরিচালকসহ বিভিন্ন পদে নটরডেম, হলিক্রস, ভিকারুন নিসা, রাজউক উত্তরা মডেলসহ বড় বড় স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বসানো হোক। কারণ, শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি করা হয়েছে সরকারি কলেজের জন্য। এমপিওভুক্তির বিষয়ে তারা কিছুই বোঝেন না। আর লোভনীয় ক্যাডারে চাকরি না পেয়ে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেয়ায় তারা ক্লাসে মনোযোগী হননা।
তিনি বলেন, সরকারি কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। অবিলম্বে শিক্ষা ক্যাডারের বিলুপ্তি চাই। এরা শিক্ষা খাতে সরকারের উন্নয়ন কাজে বাধা দিচ্ছেন। মাধ্যমিকের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গঠন, কলেজ জাতীয়করণসহ সব কাজে বাধা দিচ্ছেন।