সারাদেশে জাতীয়কৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ হাজার শিক্ষকের টাইম স্কেল ফেরত সংক্রান্ত রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাদেরকে বিষয়টি প্রসাশনিক ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার আদেশও দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে রুলের চূড়ান্ত শুনানী করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন রায় ঘোষণা করেন। এ আদেশের ফলে শিক্ষকদেরকে টাইমস্কেলের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। তবে যারা অবসরে গেছেন ও মারা গেছেন তাদের জন্য এখন কি হব? এমন প্রশ্ন অনেক শিক্ষকের।
বগুড়া থেকে আসা অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মকবুল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমি অবসরে গিয়েছি। আমিসহ অবসরে যাওয়া অন্যদের কি হবে? আমরা টাকা ফিরত দেবো কিভাবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি। আমি কিন্তু টাইম স্কেলের পাওয়া টাকা খরচ করে ফেলেছি। এই টাকা এখন ফেরত দেবো কিভাবে?
একই এলাকা থেকে আসা আরেক শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, ভোরে আদালতে এসেছিলাম। রায় শোনার জন্য। আমাদের টাইমস্কেল যেন বহাল থাকে যে জন্য আমরা আদালতে এসেছি। আশা করেছিলাম রায় পাব। কিন্তু পেলাম না। এখন সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেব। নেতারা ভুল বুঝিয়েছেন আমাদের। আইনজীবীর সঙ্গে আমরা পরামর্শ করে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, যারা শিক্ষকতা করা অবস্থায় মারা গেছেন। টাইম স্কেল নিয়েছেন তাদের কি হবে। তারা মারা গেছেন। তাদের টাকাও খরচ হয়ে গেছে। এ রায়ের পর তাদের কি হবে।
এদিন সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষকরা তাদের রিটের রায় ঘোষণা শোনেন। করোনাকালে আদালতের ভেতরে প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আছে তাই শিক্ষকরা জানালা দিয়ে তাদের কাঙ্খিত রায় মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করছেন। এ রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষকরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। রায়টি ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় ১২ নম্বর সিরিয়ালে ছিল।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
গত ১৩ জানুয়ারি সারাদেশে জাতীয়করণকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ হাজার শিক্ষকের টাইম স্কেলের রিট মামলা তিন সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্ট বিভাগকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলা নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
পরে ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের রিট খারিজ হয়ে গেছে। আমি মক্কেলের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তি আইনী প্রক্রিয়ায় যাব।
গত বছরের ১২ আগস্ট বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘টাইম স্কেল’-এর সুবিধা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সংক্ষুব্ধ শিক্ষকরা রিট করেন। তখন হাইকোর্ট বিভাগ পরিপত্র স্থগিত করে রুল জারি করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পরে স্থগিতাদেশ তুলে দিতে শিক্ষকরা আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগ তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। এর ধারাবাহিকতায় রিট মামলাটি আপিল বিভাগে গেলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রিট মামলাটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।