অভিযোগের অঙ্গুলি শিক্ষক রাজনীতির দিকে - দৈনিকশিক্ষা

অভিযোগের অঙ্গুলি শিক্ষক রাজনীতির দিকে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি- এই চারটি মৌলিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ তাদের পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী এশিয়ার ৪১৭টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা চলতি মাসে প্রকাশ করেছে। তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। অথচ এই র্যাংকিংয়ে নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয় সেরার তালিকায় স্থান পেয়েছে। অবশ্য তার আগে QS University Rankings: Asia 2018 অনুযায়ী বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় স্থান পেয়েছিল। শনিবার (৮ জুন) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন  ড. মিল্টন বিশ্বাস।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় সেই দেশের সমাজ বা রাষ্ট্রে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়, সরকারি-বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত গবেষণা কেমন হয়, সর্বোপরি যেসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে র্যাংকিং করা হয় তা ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে গত এক দশক কেবল আলোচনা, সমালোচনা ও সেমিনার হয়েছে। মাঝে মাঝে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়েছেন বিশিষ্টজনরা। অবশ্য কার্যকর পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। উল্লেখ্য, দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান ৩৯ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে চতুর্থ। বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম জনবহুল দেশ। পৃথিবীর এক হাজার ভাগের ২৪ ভাগ মানুষ এখানে বাস করে। এই জনবহুল দেশটির কোনো বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে না, এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়।

র্যাংকিং সম্পর্কে জনৈক শিক্ষাবিদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই অবস্থার সবচেয়ে বড় কারণ হলো শিক্ষায় রাজনৈতিক প্রভাব। তারপর যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা হলো- গবেষণা, অবকাঠামো, বাজেট, যোগ্য শিক্ষক এবং ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত প্রভৃতি। মানের এই অবনমনের জন্য প্রধানত দায়ী শিক্ষকরা। অবশ্য একথা লেখা বাহুল্য যে, ইউরোপ-আমেরিকায় কেউ উপাচার্য পদটি পাওয়ার জন্য ‘শিক্ষক রাজনীতি’তে নাম লেখান না। পত্রিকায়, টকশোতে সরকারের পক্ষে গলাবাজি করেন না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত স্থানে অধিষ্ঠিত করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং পদ দুটোই সম্মানিত হয়। তারা কাজ করেন নিভৃতে। কারো তাদের নাম জানার প্রয়োজন নেই। পক্ষান্তরে এই দেশে উপাচার্যরা হন রাজনৈতিক। প্রশাসনের বিভিন্ন পদ হয় লোভনীয়। বিদেশে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন এবং গবেষণায় উত্কর্ষের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে চেষ্টা করেন। এই ব্যাপারে সকলেই তার ওপর আস্থাবান। কাজেই ব্যক্তিটি কে তা জানার কোনো প্রয়োজন পড়ে না সেখানে।

র্যাংকিং-এ পৌঁছাতে হলে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হতে হবে মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং জ্ঞান সৃষ্টি ও প্রসারের কেন্দ্রস্থল। আমাদের দেশে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত করে একদিকে যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি সত্, যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ এবং নেতৃত্ব গড়ে না ওঠার ফলে দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ছাত্র রাজনীতির নামে দলীয় লেজুড়বৃত্তি থাকবে না বলেই আমরা মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হবে সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে সকল দলের ও মতাদর্শের সমন্বয় সাধন হবে। স্বাধীনভাবে সকলের মতামত প্রকাশের অধিকার থাকবে। ছাত্র-ছাত্রীরা হবে যুক্তিবাদী। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরাই নিরেট সত্য প্রতিষ্ঠা করবে—তবেই শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠবে সঠিক জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রস্থল। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আধুনিক জ্ঞান অনুসন্ধান, জ্ঞানের চর্চা ও জ্ঞানের আদান-প্রদানের তীর্থস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনের মতাদর্শ আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। অযথা জোরপূর্বক কাউকে দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করারও অবকাশ নেই। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন-বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা শিক্ষকদের অবশ্য কর্তব্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রথম শ্রেণির অন্যান্য সরকারি চাকরির তুলনায় অনেক কম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেদিকেও মনোযোগ দিতে হবে সরকারকেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মান নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে বলে আমরা মনে করি।

 

লেখক :অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032761096954346