চিকিৎসা শিক্ষায় মূল স্তম্ভ (খুঁটি) হিসেবে ধরা হয় অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়কে। পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে (প্রথম পেশাগত দেড় বছর) এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যত ভালো করবে পরবর্তী সময়ে অন্য আটটি বিষয়েও চিকিৎসা শিক্ষার্থীরা তত ভালো ফল করবে।
এমনটি হলে ভালো চিকিৎসক হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও বাড়ে। কিন্তু বলা হচ্ছে, চিকিৎসা শিক্ষায় অ্যানাটমি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের এমবিবিএস ও বিডিএস পর্যায়ে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেডিক্যাল কলেজ চট্টগ্রাম। সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্স মিলে প্রতি বর্ষে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অন্যদিকে সরকারি কুমিল্লা, রাঙামাটি ও কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে অ্যানাটমি বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। সেখানে শূন্যতার কারণে মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এনে এবং কলেজের প্রভাষক (প্রভাষকদের অ্যানাটমি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেই) দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলা এসব মেডিক্যাল কলেজে অ্যানাটমি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব মেডিক্যাল কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ১৪টি সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে।
অ্যানাটমি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-চিকিৎসক সংকট প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন ও চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এমবিবিএস কোর্সে ১১টি বিষয়ের মধ্যে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রিকে মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাঁচ বছরের এই কোর্সে অধ্যয়নরতদের প্রথমেই ওই তিনটি মৌলিক বিষয় পড়তে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সংকট অ্যানাটমিতে। ’
একই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এ কে এম মাহফুজুল হক খোকন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এমবিবিএসের প্রশ্নপত্র তৈরি ও বিভিন্ন পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ থাকার নিয়ম নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া প্রভাষকরা পরীক্ষার কোনো কাজে থাকার নিয়ম না থাকলেও তাঁরা পরীক্ষকের সহকারী হিসেবে থাকতে পারেন। অ্যানাটমিতে শুধু বিশেষজ্ঞ শিক্ষক চিকিৎসক সংকট সরকারি মেডিক্যালেই নয়, বেসরকারি মেডিক্যালগুলোতে অবস্থা আরো বেহাল। ’ অ্যানা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অ্যানাটমির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, অ্যানাটমি বিষয়ে ভালো না করলে কোনো শিক্ষার্থী শুধু মৌলিক বিষয়গুলোতেই নয়, ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোর (মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনি) ভালো চিকিৎসক হতে পারবেন না। মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি করা না গেলে ভবিষ্যতে চিকিৎসা শিক্ষায় ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে।
চমেক অ্যানাটমি বিভাগের কিউরেটর ডা. মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষায় টিউটরিয়াল ও ব্যবহারিক নিয়ে থাকি। কিন্তু মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি করতে অবশ্যই অ্যানাটমিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে আমাদের অ্যানাটমির বড় ক্লাস (লেকচার গ্যালারিতে) ও বিভিন্ন পরীক্ষা নিতে হয়। আমাদের বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের তিনটি পদই শূন্য। পদগুলো সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ৫০ বছর আগে। এরপর প্রায় পাঁচ-ছয় গুণ আসন বাড়লেও পদ বাড়েনি। ’