রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ধার্য তারিখে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আসামিদের হুমকির শিকার হয়েছেন বরগুনার সাংবাদিকরা। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে রাজপথে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী, কামরুল ইসলাম সাইমুন ও আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকনসহ কয়েকজন।
এ সময় তারা সাংবাদিকদের অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করার পাশাপাশি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন এবং প্রিজনভ্যানের ভেতর থেকে সাংবাদিকদের জুতাও দেখান। রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত আসামিদের স্বজনরা তাদের ছেলেদের নিবৃত্ত না করে এ সময় হাসাহাসি করছিলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আসামিদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ বরগুনার সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত বরগুনার সাংবাদিক নেতারা।
বরগুনার আদালত প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালনরত গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, রিফাত হত্যা মামলার ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল রোববার (২৬ জানুয়ারি)। এছাড়া এ মামলার অন্যতম আসামি নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নির জামিন বাতিল আবেদনের শুনানির দিনও ধার্য ছিল। এ উপলক্ষে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শেষে কারাগারে থাকা এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আট আসামিকে আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করলে প্রাপ্তবয়স্ক প্রধান আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বোম মেরে উড়িয়ে দেন।
এরপর রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন এবং কামরুল ইসলাম সাইমুনসহ আরও কয়েকজন রিফাত হত্যা মামলার আসামি সাংবাদিকদের অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। একপর্যায়ে প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে জুতা খুলে সাংবাদিকদের দেখান রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী।
আদালত প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালন করা একাত্তর টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন টিটু বলেন, আমিসহ অন্য গণমাধ্যমকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। এ সময় রিফাত হত্যা মামলার আসামিরা জেল থেকে বেরিয়েই আমাদের রাজপথে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার পাশাপাশি আমাদের জুতা দেখান। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়েই এখন শঙ্কিত।
যমুনা টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন বলেন, আসামিরা হুমকি দেয়ার পাশাপাশি যখন আমাদের গালমন্দ আর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছিলেন তখন তাদের স্বজনরা কেউ তাদের নিবৃত্ত করতে কোনো কথা বলেনি। আসামিদের স্বজনরা দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখছিলেন আর হাসছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে এ দৃশ্য দেখেন রিফাত ফরাজীর বাবা দুলাল ফরাজীও। তার ছেলেকে নিবৃত্ত করতে তিনিও কোনো কথা বলেননি।
এদিকে সাংবাদিকদের হুমকি প্রদানের সঙ্গে আসামিদের এমন অশোভনীয় আচরণের সময় উপস্থিত এক স্থানীয় নারী বলেন, এরা কেমন ছেলে? একটা ছেলেকে খুন করে জেলে গেছে, এখন আবার সাংবাদিকদের গালিগালাজ করছে, হুমকি দিচ্ছে। এদের কি কোনো ডরভয় নেই?
এ বিষয়ে দীপ্ত টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি শাহ আলী বলেন, একটি আলোচিত নির্মম হত্যাকাণ্ডের তথ্য দেশবাসীকে জানাতে গিয়ে আমরা এখন হুমকির সম্মুখীন। আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। আমরা আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।
এ বিষয়ে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সঞ্জীব দাস বলেন, রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের দ্বারা সাংবাদিকদের হুমকি সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একটি অশনি সংকেত। আমাদের প্রত্যাশা রিফাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখগুলোতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় কোর্ট ইন্সপেক্টর আরও দায়িত্বশীলভাবে তার দায়িত্ব পালন করবেন।