আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালেয়ের দুইজন শিক্ষকের পর্ন ভিডিও এবং ছবি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি অদ্যাবধি। পর্ন ভিডিওর বিষয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, অনৈতিক কাজে লিপ্ত দুই শিক্ষককে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বরখাস্ত অথবা বহিষ্কার না করায় বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিভাবকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এমন ঘৃণ্য কাজের পরও তারা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকেন? তবে, বিশ্ববিদ্যালয়টির অভিভাবক ও ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলমের কাছে বিষয়টি ‘নিতান্তই ব্যক্তিগত’ এবং একপক্ষ থেকে অভিযোগ আসা একটি ঘটনা মাত্র। ২৪ অক্টোবর রাতে দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত ভিসি।
আরও পড়ুন:
আহছানউল্লাহর ভারপ্রাপ্ত ভিসি স্বাক্ষরিত অকার্যকর সনদের কনভোকেশন রোববার
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈতিকতার ওপর ক্লাস নেয়া প্রয়োজন : তথ্যমন্ত্রী
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিসির কাছে সিডিতে পর্ন ভিডিওর কপিসহ লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে একমাস করে ছুটি দেয়া হয়েছে।
এদিকে, শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন পর্ন তৈরিতে অভিযুক্ত নারী শিক্ষকের স্বামী। ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে তার বাসার গেটে একটি সাদা খাম দেখতে পান। খাম খুলে দেখা যায় একটি সিডি। সিডি চালিয়ে দেখেন তার শিক্ষক স্ত্রী অপর এক পুরুষ লোকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন পুরুষ ওই লোকটি আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক।
অপর এক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছে, অভিযুক্ত পুরুষ শিক্ষকের স্ত্রীও ওই ভিডিওটি দেখেছেন এবং সত্যতা যাচাইয়ের পর তার শিক্ষক স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। পর্ন ভিডিওতে অভিযুক্ত নারী শিক্ষক আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার আগে বিতর্কিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন বলে জানা যায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। জানা যায়, অভিযুক্ত নারী শিক্ষকও কয়েকদিন আগে তার স্বামীকে তালাকনামা পাঠিয়ে দেন।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলম ২৪ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘পর্ন ভিডিওটি আমাদের হাতেও এসেছে। বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত এবং তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না।’
ভিডিওর ভিত্তিতে নৈতিক স্খলনের প্রশ্ন তুলে শিক্ষকদ্বয়কে বহিষ্কার করার কোনও উদ্যোগ আছে কি-না জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ভিসি বলেন, ‘অনৈতিকতার প্রশ্ন আসে না। বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত। একপক্ষ অভিযোগ করেছে মাত্র। নৈতিক-অনৈতিক কীভাবে বলি?’
এদিকে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলেও কনভোকেশন ডাকার খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে আহছানউল্লাহর গ্রাজুয়েট ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অনিয়মিত ব্যক্তি থাকার খবরে অবাক হয়েছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। গতকাল দৈনিক শিক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২৭ অক্টোবরের কনভোকেশনটি স্থগিত করা হয়েছে।
জানা যায়, গত আগস্টে নিয়মিত ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত ভিসি পদে আছেন ড. কাজী শরিফুল আলম।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলমের চ্যান্সেলর কর্তৃক ভিসি নিযুক্ত হওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, তিনি বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের। আর বিধান অনুযায়ী এই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রযুক্তি অথবা বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের অধ্যাপককে ভিসি নিয়োগ করতে হবে।