ইডেনের পরিস্থিতির বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান নারী আন্দোলনকর্মীরা - দৈনিকশিক্ষা

ইডেনের পরিস্থিতির বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান নারী আন্দোলনকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের ২১ জন নারী আন্দোলনকর্মী বলেছেন, রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ‘ভয়াবহ পরিস্থিতির’ সত্য-মিথ্যা উদ্‌ঘাটনে একটি বিচার বিভাগীয় কমিটি করতে হবে। তাঁরা বলেছেন, কলেজের সাম্প্রতিক অস্থিরতার ঘটনায় সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে।

গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নারী আন্দোলনের ওই কর্মীরা এসব কথা বলেছেন। তাঁরা ইডেন কলেজ ঘিরে যেসব অভিযোগ সামনে এসেছে, তা সত্য প্রমাণিত হলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে (২০১২) কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক দশক ধরে শাসক দল ও তার ছাত্রসংগঠনের মধ্যে একটি অলিখিত চুক্তি গড়ে উঠতে দেখেছি আমরা। সেটি হলো শাসক দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের ছাত্রসংগঠনের নেতা-নেত্রী ও কর্মীরা শারীরিক ও মতাদর্শিক লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করবেন।

এর প্রতিদানে তাঁরা আসন-বাণিজ্য থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে ছাত্র থাকা অবস্থায় নিজ নিজ সম্পদের এমন পাহাড় গড়ে তুলবেন, যা বৈধ উপায়ে কোনো মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর পক্ষে সারা জীবনেও অর্জন করা সম্ভব নয়। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দলকানা কর্ণধারেরা এসব না বোঝার ভান করে থাকবেন, বিনিময়ে তাঁদের নিজেদের “অধ্যক্ষ” বা “উপাচার্য” পদ সুরক্ষিত থাকবে।

চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও আসন-বাণিজ্যের এই সন্ত্রাস ও অপরাধের রাজত্বে ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীরা ভয়াবহ একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। সেটি হলো ছাত্রীদের যৌন শোষণের মাধ্যমে তাঁদের পকেট ও নেতৃত্বের প্রোফাইল ভারী করা।’

নারী আন্দোলনের কর্মীরা বলেছেন, ‘ইডেন কলেজে প্রবর্তিত ব্যবস্থার দুটি দিক আছে, যেগুলো সমানভাবে ভয়াবহ। ছাত্ররাজনীতিতে ইচ্ছুক মেয়েদের মধ্যে ধারণা বপন করা হয়েছে যে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে নেতাদের সঙ্গে রাত কাটাতে হবে। দ্বিতীয় দিকটি হলো ছাত্রলীগ নেত্রীদের পরিচালিত যৌন অপরাধ চক্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশ না মানলে নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হবে।  

মারধর, বিবস্ত্র করে ছবি তুলে “ভাইরাল” করার হুমকি, “শিবির” তকমা দিয়ে ছাত্রীনিবাস থেকে বের করে দেওয়া ইত্যাদি করা হয়। আধিপত্য বিস্তারে দলীয় কোন্দলের কারণে ফাঁস হওয়া এই কাহিনিগুলো নারী আন্দোলনকর্মী হিসেবে আমাদের সংক্ষুব্ধ করেছে। কারণ, এ ব্যবস্থার বিস্তার ঘটেছে নারী নেতৃত্বাধীন শাসনামলে নারীশিক্ষার অগ্রদূত প্রতিষ্ঠান ইডেন কলেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখাপড়া করেছেন। তিনি এই কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন।

লক্ষণীয় যে সরকার এখনো ইডেনের বিষয়ে নীরব, শিক্ষামন্ত্রী একজন নারী হয়েও কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এমন কিছু দেখা যায়নি। পদত্যাগ করতে চাওয়া তো দূরের কথা।’ 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘(ইডেন কলেজের) ভয়াবহ পরিস্থিতির সত্য-মিথ্যা উদ্‌ঘাটনের সাহসী কাজ একটি বিচার বিভাগীয় কমিটিই করতে পারবে বলে আমরা মনে করি এবং আমরা সেটি গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ক্ষমতাশালীরা যেহেতু বিষয়টিকে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বা সমস্যা হিসেবেই পরিবেশন করছেন, আমরা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-এর প্রতি।

যৌন শোষণ একটি আইনি অপরাধ এবং ইডেন কলেজে যা যা ঘটেছে, তা সত্য প্রমাণিত হলে আইনটির ১১ নম্বর ধারার অধীন কঠিনভাবে শাস্তি দেওয়া হোক।’

এ বিবৃতিতে সই করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, কাজলী শেহরীন ইসলাম ও সামিনা লুৎফা; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও শিল্পী বড়ুয়া; আদিবাসী অধিকার সুরক্ষাকর্মী রানি য়েন য়েন; ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাজনীন শিফা; লেখক ও গবেষক পারসা সানজানা সাজিদ; মানবাধিকারকর্মী রোজিনা বেগম; নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক নাসরিন খন্দকার; গবেষক ও অ্যাকটিভিস্ট দিলশানা পারুল; নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ; বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির নেতা তাসলিমা আখতার; শিক্ষক ও গবেষক শ্যামলী শীল; নোয়াখালীর নারী অধিকারকর্মী লায়লা পারভীন; আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া; লেখক ও গবেষক সায়েমা খাতুন; যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাদাফ নূর; কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হানা শামস আহমেদ; লেখক ও নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ এবং সাংবাদিক ও গবেষক সায়দিয়া গুলরুখ।

ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু করে ২৫ সেপ্টেম্বর দিনভর উত্তপ্ত ছিল ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস। ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ওরফে রীভা, সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় সেদিন রাতেই ইডেন কলেজ কমিটি স্থগিত ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধীপক্ষের ১২ নেত্রীসহ ১৬ নেতা-কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অস্থিরতার ঘটনায় ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

ইডেন কলেজে অস্থিরতা চলাকালে বহিষ্কৃত নেত্রী সামিয়া আক্তারসহ কয়েকজন অভিযোগ তোলেন, তামান্না ও রাজিয়া সাধারণ ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা সম্প্রতি কলেজের ফটকে ‘অনৈতিক কাজে বাধ্য করার’ অভিযোগ তোলা ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করেন।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056509971618652