কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম কর্মসূচি পরিচালনার জন্য শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফাউন্ডেশনের জেলা উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষক নিয়োগে জনপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুসারে প্রতি উপজেলায় ইউএনওকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের একটি নিয়োগ কমিটি শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই কমিটি চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে সুপারিশ পাঠায়। ওই সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা নিয়োগ কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে যাঁদের নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে তাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে অন্যদের নিয়োগ দিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুড়িগ্রামের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
রাজীবপুরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করেন শরীফা খাতুন। তিনি লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে অকৃতকার্য প্রার্থী মোশারফ হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শরীফা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ঘুষের টাকা দিতে পারিনি বলে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ একই ধরনের অভিযোগ করেছেন রাজীবপুরে সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের উত্তীর্ণ হওয়া চাকরিপ্রার্থী এরশাদ আলী ও লুত্ফর রহমান।
জানা গেছে, উপপরিচালক অর্থের বিনিময়ে রৌমারী, চিলমারী, উলিপুর, রাজারহাট ও নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেক প্রার্থীকে বাদ দিয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক ও সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের জন্য চলতি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজীবপুরে চার, রৌমারীতে ছয়, চিলমারীতে ছয়, উলিপুরে ১০, নাগেশ্বরীতে ১৭ ও রাজারহাট উপজেলায় আটজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলায় নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
এ প্রসঙ্গে নিয়োগ কমিটির সভাপতি রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রকল্পের নিয়ম অনুসারে যারা পাস করেছে তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক তাদের বাদ দিতে পারেন না।’
কুড়িগ্রাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা নিয়োগ কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যাদের জন্য সুপারিশ করেছে, তা আমরা রাখতে পারি আবার না-ও পারি। এখানে অনিয়ম বা দুর্নীতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।’