এইচএসসির বাংলা প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ | পরীক্ষা নিউজ

এইচএসসির বাংলা প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ

এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রণীত প্রশ্নপত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন-এটি রীতিমতো ধর্মীয় উসকানির শামিল। এ পত্রের একটি প্রশ্ন হলো-‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ ত

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রণীত প্রশ্নপত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন-এটি রীতিমতো ধর্মীয় উসকানির শামিল। এ পত্রের একটি প্রশ্ন হলো-‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই

নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’

আরও পড়ুন : এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানিতে জড়িতরা চিহ্নিত হচ্ছেন : শিক্ষামন্ত্রী (ভিডিও)

রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের প্রশ্ন এটি। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এভাবেই সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : 'প্রশ্নকর্তা উদ্দেশ্যমূলক এটা করেছে, মডারেটরদেরও কঠিন শাস্তি দেয়া হবে'

শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও প্রশ্নপত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের বাস্তবিক চিত্রও এমন নয়। ধর্মীয় নানা উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ সবাই অংশগ্রহণ করে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো কেমন হবে-এ ধরনের লিখিত নির্দেশনা এবং প্রশ্ন প্রণেতা ও প্রশ্ন সেটারদের ওরিয়েন্টশন করানো হয়। এর পরেও অমূলক প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হয়েছে। এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।

এইচএসসির বাংলা প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ

ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল ১১ নম্বর প্রশ্নে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে অনুচ্ছেদে ধর্মকে সামনাসামনি করে উদ্দীপকে এ কথা বলা হয়। এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে-“(ক) মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারত আসেন। (খ) ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব।-ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের ‘নেপাল’ চরিত্রের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ‘মিরজাফর’ চরিত্রের তুলনা কর। (ঘ) ‘খাল কেটে কুমির আনা’-প্রবাদটি উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।-উক্তিটির সার্থকতা নিরূপণ কর।” সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য উদ্দীপকে অনেক প্রাসঙ্গিক উদাহরণ টানা যেত। কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে।

শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মকে সামনাসামনি করা ঠিক হয়নি। মুসলমানের কাছে জমি বিক্রি করে দেশ ত্যাগ করছে-এ সমস্ত তথ্য সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। ঘটনা কখনো কাম্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘আরও ভালো প্রশ্ন করা যেত। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবতাবোধ বাড়ানো। ধর্মে-ধর্মে সহিষ্ণুতা বাড়াতে কাজ করা।’ অনেক চিন্তা করে পরীক্ষার প্রশ্ন করা প্রয়োজন বলে অধ্যাপক কায়কোবাদ মনে করেন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপূর্ণ কোনো বক্তব্য যেন না থাকে সে জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে ওরিয়েন্টশন করানো হয়। প্রশ্নপত্র দেখার কোনো সুযোগ নেই।’ কীভাবে এ ধরনের প্রশ্ন করা হলো তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।