জাতীয় সংসদে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১ পাসের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে যাত্রা শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সম্প্রতি পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর আইন, ২০২০-এর খসড়ার ওপর মতামত চাওয়া হয়েছে, যার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এই ছবি দেখেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিচয় বহন করে। আর যেটা একেবারে নিজস্ব। কিন্তু একই নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলে শিক্ষার্থীদের পরিচয়সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আরো মনে করেন, পাশাপাশি দুই জেলায় দুটি একই নামের বিশ্ববিদ্যালয় হলে চেনার সুবিধার্থে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ হয়ে এলাকার নামই গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, যেমন পিরোজপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়। যা জাতির জনকের সম্মান ক্ষুণ্ণ করবে বলে মনে করছেন তাঁরা। দুটি বিশ্ববিদ্যালয় একই নামে হলে পরিচয়ের দিক দিয়ে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়েরই অস্তিত্বসংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম বলেন, একই নামে দুই বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরিকল্পনা যাঁরা করছেন, তাঁরা অদূরদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে মনে হয়। যদি এটি প্রাইমারি স্কুল হতো তাহলে এটা জাতীয় ইস্যু হতো; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হলো সেটি আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে পরিচালিত হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো নাম ধারণ করতে পারে; কিন্তু দুটি বিশ্ববিদ্যালয় একই নাম নিয়ে পরিচালিত হলে তার জন্য একজন শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক নানাভাবে বিভ্রান্ত হবেন এবং আন্তর্জাতিক মহলেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে, যেহেতু প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র ও স্বাধীন হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. হাসিবুর রহমান বলেন, একই নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলে পরিচয়সংকট দেখা দেবে, আর যেহেতু পিরোজপুরের বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি তাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করব।
একই নামে দুই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হুবহু একই নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হয় কীভাবে, তা বোধগম্য নয়। একই নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলে আসল নাম- অর্থাৎ জাতির পিতার নাম কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে। তাই পিরোজপুরে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নির্ধারণ যৌক্তিক নয় বলে আমি মনে করি।
একই নামে দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ড. মো. শাহজাহান বলেন, একই নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই পরিচয়সংকটে পড়বে। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কথা বলব।