একমাত্র ছাত্রাবাসটি ছাত্রলীগের দখলে - দৈনিকশিক্ষা

কমিটি না থাকলেও চলছে ৮ নেতার রাজত্বএকমাত্র ছাত্রাবাসটি ছাত্রলীগের দখলে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারি বাঙলা কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র একটি ছাত্রাবাস। সেখানে বর্তমানে বাস করছে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী। ছাত্রাবাসটিতে নেই ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা। ফলে শিক্ষার্থীদের নিজেদের রান্না করে অথবা কলেজের বাইরে গিয়ে খেতে হয়। এ নিয়ে হলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের আক্ষেপের কথা জানিয়ে বলেছে, পরীক্ষার দিনও কলেজের বাইরে গিয়ে খেয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। সোমবার (২৬ আগস্ট) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও তানজিদ বসুনিয়া।

৩৫ কক্ষের ছাত্রাবাসটি কলেজ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেই। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আট নেতার দখলে ছাত্রাবাসটি। এ নেতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে কোন শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে থাকবে কিংবা থাকবে না। আবার ছাত্রত্ব নেই এমন অন্তত ৬০ জন বহিরাগত ছাত্রাবাসটিতে বাস করছে।

ছাত্রাবাসের বাইরে কলেজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আধিপত্য। কলেজটিতে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রী রয়েছে। তাদের জন্যও নেই থাকার ব্যবস্থা। নানাভাবে এ ছাত্রীদের হেনস্তা হতে হয়। কয়েকজন ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগও করেছে।

গত বছর মে মাসে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান অনিক এক ছাত্রীকে মারধর করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়। আর চলতি বছর মার্চ মাসে ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে ওই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আর কলেজে প্রবেশ করতে পারেননি। বর্তমানে নতুন নেতাদের নেতৃত্বে চলছে কলেজ ছাত্রলীগের কার্যক্রম।

একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ছাত্রলীগের রাজনীতি করার নিশ্চয়তা দিলে ছাত্রাবাসে ওঠার অনুমতি মেলে। ছাত্রলীগ নেতারা তাঁদের আধিপত্য অনুসারে ছাত্রাবাসের রুম দখলে রেখেছেন। এভাবেই ছাত্রাবাসের ৩৫টি রুম ভাগ-বাটোয়ারা হয়। যে শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে থাকার অনুমতি পেয়েছে নিয়মিত তাদের মিটিং-মিছিলে অংশ নিতে হয়। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মিরপুর এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।

ছাত্রাবাসে নেতৃত্ব দানকারী ছাত্রলীগ নেতারা হলেন নাজমুল হোসেন রানা, কাজী লাবু, নাহিদ হোসেন, তরিকুল ইসলাম রাহুল, এইচ এম সাদ্দাম হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন পলাশ, মানিক চৌধুরী ও হামিদুল্লাহ জিহাদ।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে সিট না পেলেও অনেক আগে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে যাওয়া ৬০ জন বহিরাগত থাকছে বহাল তবিয়তে। ছাত্রলীগের ভয় দেখিয়ে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে নানা কাজকর্ম করিয়ে নেয়।

দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় ছাত্রাবাসটি জরাজীর্ণ। সম্প্রতি সংস্কারকাজ হওয়ায় কিছুটা ব্যবহার উপযোগী হয়েছে। আর শেখ রাসেল ছাত্রাবাস নামে নতুন একটি ছাত্রাবাসের নির্মাণকাজ চলছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, এ নির্মাণকাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ছাত্রলীগকর্মী বলেন, ‘হলে তো অনেকেই উঠতে চায়; কিন্তু সবাইকে কি আর ওঠানো সম্ভব? এখানে ছাত্রলীগের নেতার হাত ছাড়া কারো হলে ওঠার সুযোগ নেই। যারা রাজনীতি করবে, তারাই উঠতে পারবে। আমরাও এভাবেই উঠেছি।’

আরেক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ‘যেহতু এখন ছাত্রলীগের কমিটি নেই তাই নেতারা তাঁদের কর্মী বাড়াতে চাচ্ছেন। এ জন্য একনিষ্ঠ কর্মী ছাড়া অন্য কারো হলে ওঠার সুযোগ নেই। যে নেতার যত বেশি প্রভাব, তিনি তত বেশি রুম দখলে রেখেছেন।’

মাসুদ রানা নামের একজন শিক্ষার্থী তাঁর বিভাগের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘বাইরে মেসে থাকতে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু কোনো উপায় নেই। একাধিকবার হলে ওঠার চেষ্টা করেছি। স্যারদেরও ধরেছি। হলে উঠতে পারিনি।’

বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ি রংপুরে। পাইকপাড়ার একটি মেসে থাকি। থাকা-খাওয়া বাবদ প্রায় সাত হাজার টাকা ব্যয় হয়। বাড়ি থেকে এ টাকা পাঠালেও কৃষক বাবার পক্ষে প্রতি মাসে এত টাকা পাঠানো কষ্টকর। যদি কলেজের ছাত্রাবাসে থাকতে পারতাম, তাহলে পরিবারের অনেক উপকার হতো।’

কলেজের হোস্টেল সুপার ড. সিকান্দার আলী ভূঁইয়া। কলেজে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফেরদৌসি খান বলেন, ‘আবাসন সমস্যা তো সব কলেজেই। আমাদের এত ছোট একটি জায়গায় সব শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে ছেলেদের একটি হলে শিক্ষার্থীরা থাকছে এবং আরো একটি হলের নির্মাণকাজ চলছে। আশা করছি দ্রুতই কাজ শেষ হবে।’

মেয়েদের হলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়েদের হলের বিষয়টি নিয়েও আমরা এরই মধ্যে কথা বলেছি। মেয়েদের জন্য আপাতত একটি হলের স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে।’

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071020126342773