একাধিক নেতাকে মাসে ২৫ কোটি টাকা দিতেন শামীম - দৈনিকশিক্ষা

একাধিক নেতাকে মাসে ২৫ কোটি টাকা দিতেন শামীম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে প্রতি মাসে ২৫ কোটি টাকা দিতেন গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম। যাদের পকেটে এই টাকা যেত, তারা তাকে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা করতেন। তবে লাভ-ক্ষতি যাই হোক প্রতি মাসে ওই অঙ্কের টাকা দেয়াটা ছিল বাধ্যতামূলক। জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এমন তথ্যই জানিয়েছেন শামীম। তিনি বলেছেন, নেপথ্যে থেকে কিছু রাজনৈতিক নেতা নিয়মিত তাঁর টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির টাকার ভাগ পেতেন। কার কাছে কীভাবে ওই টাকা পৌঁছে দিতেন তা বিস্তারিত তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে ধরেন। এই তালিকায় মন্ত্রী-এমপিসহ অনেকের নাম রয়েছে। শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে ও তাঁর ফোনের কললিস্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সদস্যরা। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবুল খায়ের।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন নির্মাণের ৭৫ কোটি টাকার টেন্ডার জাল কাগজপত্র দাখিল করে হাতিয়ে নেন জি কে শামীম। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জাল কাগজপত্রের প্রমাণ পেয়েছে। জি কে শামীমকে কাজ পাইয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরেই খুন হয়েছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী।

এদিকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পিয়ন থেকে দপ্তর সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেয়া কাজী আনিসুর রহমানকে খুঁজছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি যে তালিকা নিয়ে অভিযানে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেখানে তাঁর নাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যা বলেছেন শামীম: গত শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনে ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্সে অভিযান চালিয়ে জি কে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের (চরভুলুয়া গ্রামের) দক্ষিণপাড়ার মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে তিনি। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিএনপি সরকারের আমলে এক মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম। এজন্য বিএনপির ওই মন্ত্রীকে তাকে প্রতি মাসে ১০ কোটি টাকা দিতে হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভোল পাল্টিয়ে যুবলীগের পরিচয় ব্যবহার করে একই ব্যবসা চালিয়ে যান তিনি।

শামীম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীকে ১২শ’ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন। টাকা না দিলে ওই প্রধান প্রকৌশলী বিল আটকে দিতেন। এত টাকা দিয়ে লাভ করবো কীভাবে। এ জন্য অনিয়মের আশ্রয় নেন। আলোচিত জি কে বিল্ডার্স কোম্পানির বালিশকাণ্ড ঘটানোর পেছনেও এটি অন্যতম কারণ বলে শামীম জানিয়েছেন। তিনি নিজেই কমিশনের অর্থবণ্টন করতেন। অধিকাংশ সময় নগদ টাকা দিতেন। মাঝেমধ্যে শামীমের দু’জন বিশ্বস্ত সহযোগীর মাধ্যমেও কমিশনের টাকা পৌঁছে দেয়া হতো।

জিজ্ঞাসাবাদে শামীম স্বীকার করেন, ঢাকার বাসাবো ও নিকেতনে তাঁর অন্তত পাঁচটি বাড়ি রয়েছে। রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট আছে। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় তার বাড়ি রয়েছে। শামীম দাবি করেছেন, ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেক শত্রু হয়েছে তাঁর। তাই সব সময় একাধিক অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে চলতেন।

৭৫ কোটি টাকার কাজ যেভাবে পান শামীম

শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন নির্মাণের ৭৫ কোটি টাকার কাজ জাল কাগজপত্র দাখিল করে হাতিয়ে নেন জি কে শামীম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে এই দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র জমা দেয়ার সুযোগ করে দেয় ছাত্রলীগের একাংশ। কাজটি পায় জি কে শামীমের মালিকানাধীন মেসার্স দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-জিকেবিএল (জেভি)। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রভাবে অন্য ঠিকাদারেরা দরপত্র জমা দিতে পারেননি। কাজটি পেতে চবি ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতাদের ২ কোটি টাকা দেয়া হয়। এর বাইরে তিন শিক্ষক প্রত্যেকে ২০ লাখ টাকা করে পান। এ টাকার ভাগবাটোয়ারা কেন্দ্র করে চবি ছাত্রলীগের গ্রুপিং চরমে ওঠে। এর জের ধরে ২০১৬ খ্র্রিষ্টাব্দের ২০ নভেম্বর নিজের বাসায় খুন হন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। প্রথমে তা আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসে দিয়াজকে খুন করা হয়েছে। ওই সময় দিয়াজের বাসা থেকে ২৫ লাখ টাকার একটি চেকও উদ্ধার করা হয়। চেকটি চবি দ্বিতীয় কলা অনুষদ ভবনের কাজের কমিশন সংক্রান্ত কি না, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।

জি কে বিল্ডার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ

জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জি কে বিল্ডার্স। এ প্রতিষ্ঠানের হাতে প্রকল্প যাওয়া মানেই ধাপে ধাপে ব্যয় বৃদ্ধি। এমনকি প্রকল্পের কাজ কমিয়ে দেয়ার পরও ব্যয় বাড়ানোর নজির গড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শামীমকে গ্রেফতার করার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর পর্যায়ে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, আগারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কমপ্লেক্স নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্ব)’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০০৯ খ্র্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে ২০১৩ খ্র্রিষ্টাব্দের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়। প্রকল্প গৃহীত হওয়ার সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ কোটি ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। জি কে বিল্ডার্স কাজ শেষ করে ২৪ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। প্রল্পটি শেষ হওয়ার প্রায় এক বছর পর পরিদর্শনে যায় সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। তারা দেখতে পায় নানা অনিয়ম ও ত্রুটির চিত্র। আইএমইডির দায়িত্বশীলরা দেখেন, বেশ কিছু রুমের দরজায় ব্যবহৃত ডোর লকসহ বিভিন্ন ফিটিংস দেয়া হয়েছে নিম্নমানের। এছাড়া সাউন্ডপ্রুফ প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় কর্মকমিশন সদস্যদের কক্ষে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে পাশে ব্যক্তিগত কর্মকর্তার কক্ষে অপেক্ষমান পরীক্ষার্থীরা সব প্রশ্ন শুনতে পারেন। ফলে গোপনীয়তার জায়গাটি নষ্ট হয়।

আনিসকে খুঁজছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান। যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পিয়ন থেকে দপ্তর সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেয়ার পাশপাশি এখন তিনি শত কোটি টাকার মালিক। তাকে খুঁজছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

জানা গেছে, কাজী আনিসুর রহমানের পিতার নাম ছায়েকুজ্জামান। গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের বোয়ালিয়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবা ধান ভাঙ্গার মেশিনের ব্যবসা করতেন। কাজী আনিসেরা দুই ভাই, দুই বোন। তার ছোট ভাই ব্যাংকার। আনিস বিবাহ করেছেন একই গ্রামের বাচ্চু মুন্সির মেয়েকে। যুবলীগের এক সাবেক চেয়ারম্যানের কাছে আনিসকে নিয়ে যান বাচ্চু মন্সি। পরে যুবলীগ অফিসে ৫ হাজার টাকা বেতনে পিয়নের চাকরি পান। ৭/৮ বছরে রাতারাতি এলাকায় আনিস হয়ে যান কিং। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে মা ফিলিং স্টেশন চালান আনিসের পিতা। গ্রামে টালি করা দুই তলা বাড়ি। উপজেলা সদরে আনিসের রয়েছে দুটি বাড়ি।

স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040810108184814