এবার ভিসিপুত্রেরও পদত্যাগ দাবি করলেন সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আহছানউল্লাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. কাজী শরিফুল আলমের পদত্যাগের দাবিতে চারদিন ধরে আন্দোলন করছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে অংশ না নিতে শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভিসি পুত্র কাজী আহমেদ ফারহানের বিরুদ্ধে। ফারহান বিবিএর শিক্ষক। তার দেয়া হুমকি আন্দোলনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। শিক্ষার্থীরা ভিসি ও তার পুত্র কাজী ফারহান আহমেদের পদত্যাগসহ ১২ দফা দাবিতে আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন। দাবি আদায়ে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধসহ সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর পদত্যাগ করেছেন অশ্লীল ভিডিওর সাথে জড়িত আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালেয়ের দুই শিক্ষক। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন তারা। অশ্লীল ভিডিও এবং ছবি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে, দৈনিক শিক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশ ও ফেসবুক লাইভে প্রচারের পর অভিযুক্ত দুই শিক্ষক পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করা একজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অশ্লীল ভিডিওটির বিষয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অবৈধ ভিসির ছেলে ও বিবিএ ডিপার্টমেন্টর প্রধান কাজী আহমেদ ফারহান ভিসির পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনে অংশ না নিতে শিক্ষার্থীদের চাপ ও হুমকি দিচ্ছিলেন। তাই, আজকে থেকে অবৈধভাবে দায়িত্বে থাকা ভিসির সাথে তার ছেলে কাজী আহমেদ ফারহানের পদত্যাগের দাবিও যোগ করা হয়েছে। একই সাথে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধসহ সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১২দফা দাবি জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড থেকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের আলোচনায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হলেও তারা ক্যাম্পাসে আলোচনা করতে চাননা। আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আন্দোলনকারীরা প্রতিনিধিত্বমূলক আলোচনায় যাবেনা। ক্যাম্পাসের বাইরে আহছানিয়া মিশনে আলোচনা হলে আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকবে না। তাই, আমরা ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করার প্রস্তাব দেই। কিন্তু ক্যাম্পাসে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অবৈধভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্বেচ্ছাচারীভাবে পরিচালনা করছেন ড.কাজী শরিফুল আলম। অভিযোগের ভিত্তিতে সমাবর্তন বাতিল করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কবে সমাবর্তন হবে তা অনিশ্চিত। এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৮ অক্টোবর অবৈধ ভিসির পদত্যাগ ও অশ্লীল ভিডিও তৈরিতে জড়িত শিক্ষকদের বহিষ্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. কাজী শরিফুল আলমের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া আহছানউল্লাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলেও উল্লেখ করেন তারা।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা জানান, বিভিন্ন সময় নামকরা ও চৌকস শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয় হতে রিজাইন নিতে বাধ্য করেছেন কাজী শরিফুল আলম। সেমিস্টার ফি বাড়ানোর পরও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি ও তার চাটুকার কিছু কর্মকর্তার জন্য আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর সুনাম হারাতে বসেছে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি-প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নেই বেসরকারি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ভারপ্রাপ্ত বা অনিয়মিত ভিসি কর্তৃক স্বাক্ষরিত অকার্যকর মূল সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য প্রায় আড়াইহাজার গ্র্যাজুয়েটকে ডাকা হয়েছিল ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ১১তম কনভোকেশনে। কিন্তু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সমাবর্তনে আসেননি। সমাবর্তন স্থগিত করা হয়। তখন বিষয়টি আমাদের নজরে আসে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা ভিসি আপসরণসহ বারোদফা দাবি জানিয়েছি। দাবিগুলো হল, অবৈধ ভিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা, অবৈধ ভিসি কর্তৃত বহিষ্কৃত ১০ শিক্ষককে পুর্নবহাল, এতদিন ভার্সিটি থাকা অবস্থায় যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাতিল করতে হবে, এই অথরিটির অধীনে কোনো ধরনের কার্যক্রম এ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে না, সেমিস্টার ফিয়ের টাকার কি খাতে ব্যায় হচ্ছে তা জানাতে হবে,বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন, ডেভেলপমেন্ট ফি বাবদ নেয়া টাকার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন গঠন, ভর্তি পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষা বাতিল করে নতুন একাডেমিক ক্যালেন্ডার জারি করা, সেমিস্টার ফিয়ের ব্যয়ের হিসেব বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রকাশ করা, প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করা ভিসিপুত্র কাজী ফারহানকে বহিষ্কার, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবেনা মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি, ল্যাব, ক্লাসরুমের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ওয়াশরুমের হাল, নিরাপত্তার বেহাল দশা, ক্যান্টিনের খাবার ও পরিচ্ছন্নতার মানসহ যেসব ন্যায্য সুযোগ সুবিধা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহি করতে হবে, ক্লিয়ারেন্সের নামে টাকা নেয়া বাতিল করতে হবে, তাছাড়া ক্যারি ক্লিয়ারেন্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ-৩ করতে হবে, এতদিন ধরে করে আসা সব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জবাব শিক্ষার্থীদের দিতে হবে।
কনভোকেশন বাতিলসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বহুদিন ধরে জমাট ক্ষোভ আন্দোলনে রূপ নিয়েছে বলেই মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের একাত্মতা ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। বেশ কয়েকজন সাবেক সদস্য যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে।
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘আহছানউল্লাহর ভারপ্রাপ্ত ভিসি স্বাক্ষরিত অকার্যকর সনদের কনভোকেশন রোববার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ক্ষোভে ফেটে পরেন গ্র্যাজুয়েটরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি-প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নেই বেসরকারি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ভারপ্রাপ্ত বা অনিয়মিত ভিসি কর্তৃক স্বাক্ষরিত অকার্যকর মূল সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য প্রায় আড়াইহাজার গ্র্যাজুয়েটকে ডাকা হয়েছিল ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ১১তম কনভোকেশনে। ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়াতে বৈধ ভিসি নিযুক্তির পর এসব গ্র্যাজুয়েটদের ফের সনদ নিতে হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত না হলে ভিসি-প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষরা অবৈধ বা বিধি মোতাবেক নিযুক্ত নন। আর ভারপ্রাপ্ত ভিসি থাকা অবস্থায় কনভোকেশন করতে পারেন না এবং মূল সনদে স্বাক্ষর করতে পারেন না।