এরশাদকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে সংসদে হট্টগোল - দৈনিকশিক্ষা

এরশাদকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে সংসদে হট্টগোল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

‘দশম জাতীয় নির্বাচনে লালমনিরহাট-১ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে’, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের এমন বক্তব্যে সংসদে হট্টগোল হয়েছে। 

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) মাগরিবের নামাজের বিরতির পরে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নেন লালমনিরহাট-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন।

মোতাহার হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাকে ছয়বার সংসদে এবং দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট করতে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন। এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। প্রথমবার ৫৫ হাজার ভোটে জিতেছি। গতবার জিতেছি ২ লাখ ৫৫ হাজার ভোটে।

মোতাহার হোসেন বলেন, গত ভোটে (দশম জাতীয় নির্বাচনে) আমার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উনি মাত্র ৭ হাজার ভোট পেয়ে ওনার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। আরও একবার আমি সংসদ সদস্য হতে পারতাম। আগেরবার আমি জিতেছি ২ হাজার ৭০০ ভোটে। পরেরবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে ২ হাজার ২০০ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন। তার ফলে গতবার আমার এলাকার ভোটার উনাকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর অবস্থাটা কী।

এমপি মোতাহার হোসেনের এমন বক্তব্যে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে কাজী ফিরোজ রশীদ দাঁড়িয়ে মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় মোতাহার হোসেন থেমে যান। কিছুক্ষণ পর সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু তাঁকে বসতে বলেন এবং পরে চাইলে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেবেন বলে জানান। তবে তাতে ফিরোজ রশীদ নিবৃত্ত না হয়ে মাইক ছাড়াই কথা বলা অব্যাহত রাখেন। এ সময় সংসদে চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায়। 

কাজী ফিরোজ রশীদের উদ্দেশে মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আপনি সিনিয়র সংসদ সদস্য…আমার সময়ে আরেকজন বক্তৃতা দেবেন কীভাবে?’ এ সময় ডেপুটি স্পিকার মোতাহার হোসেনের মাইকও বন্ধ করে দেন। তিনি মোতাহার হোসেনকে দাঁড় করিয়ে রেখে কাজী ফিরোজ রশীদকে এক মিনিটের জন্য ফ্লোর দেন।

ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এরশাদের জামানত কোথায় বাজেয়াপ্ত হয়েছে? এরশাদ তো ২০১৪ সালে ইলেকশনই করেননি। রাঙ্গা (মসিউর রহমান রাঙ্গা) সাহেব আছেন আমাদের চিফ হুইপ, তিনি গিয়ে একটি আসনে জোর করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর (মোতাহার হোসেনের) বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে হবে। ক্ষমা চাইতে হবে।’

এ সময় ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি পরে সময় নিয়ে যদি কোনো বক্তব্য থাকে বলবেন।’ এ সময় রাঙ্গা মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করেন। ডেপুটি স্পিকার মোতাহার হোসেনকে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। বলেন, ‘আমি রাঙ্গা সাহেবকে একটু শুনি।’ 

রাঙ্গা ফ্লোর নিলে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তিনি ফ্লোর নিয়েই বলেন, ‘চলে যাব। চিৎকার আর দরকার নেই, আমরা চলে যাব।’

পরে ডেপুটি স্পিকার তাঁকে বসতে বলেন। তবে ডেপুটি স্পিকারের কথায় কর্ণপাত না করে জাতীয় পার্টির এমপিরা চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে আপত্তিকর কিছু থাকলে তা এক্সপাঞ্জ করা হবে বলে জানান ডেপুটি স্পিকার। 

মোতাহার হোসেনের উদ্দেশে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি অ্যাজেন্ডার ওপরে কথা বলবেন। এমন কথা বলবেন না যাতে সংসদ পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটে।’ ডেপুটি স্পিকার পরে তাঁর বক্তব্য শেষ করার জন্য ফ্লোর দেন।

ঠিক এই সময়ে তড়িঘড়ি করে হাউসে প্রবেশ করে সভাপতির আসনে বসেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকার হাউসে ঢুকে সবাইকে বসতে বলেন। তিনি বলেন, ‘হাউসের একটি ডেকোরাম আছে। এখানে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা হচ্ছে। এখানে একজন বক্তা তাঁর বক্তব্য রাখছেন। সেই বক্তব্যে আপত্তিকর কিছু থাকলে সেটা আপনারা উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু এ জন্য আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। উনি (মোতাহার) ওনার বক্তব্য শেষ করবেন।’

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা হাত তুলবেন। আমরা যখন মনে করব, আপনাদের সুযোগ দেওয়ার বিষয় আছে, আমরা সেই সুযোগ দেব। আপনাদের কথাও শোনা হবে। যদি এমন কোনো বিষয় থাকে, যেটা এক্সপাঞ্জ করার প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ আছে।’ 

স্পিকার বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা চলমান থাকার সময় একজন বক্তা যখন বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা আপনিও হতে পারেন, বিরোধী দলের সদস্যও হতে পারেন। সেই বক্তব্য চলাকালীন আপনি হাত তুলে আপত্তি করেছেন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তারপরে সেই মুহূর্তে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনা করা সমীচীন নয়। সেটা পরমুহূর্তে হতে পারে। আমার অ্যাজেন্ডার মাঝখানে নয়। কাজেই আমি আপনাদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতা আশা করছি। আপনাদের বিষয়টিও শোনা হবে। আমি এখন জনাব মোতাহার হোসেনকে যেটুকু সময়ক্ষেপণ হয়েছে, সেটাসহ বক্তব্য শেষ করার জন্য ফ্লোর দেব। কী বিষয়ে আপত্তি, কীভাবে তা নিষ্পত্তি হবে, সেটা দেখব।’ 

ফ্লোর পেয়ে মোতাহার হোসেন বলেন, ‘শেষবার ভোটে...ওনারা সবাই ছিল, রাঙ্গা ছিল। ওই বরিশালের রুহুল আমিন হাওলাদার ছিলেন এবং এরশাদ সাহেবের ভাইও ছিলেন ঢাকা এয়ারপোর্টে। আমাকে এরশাদ সাহেবই প্রশ্নটা তুলেছিলেন, তুমি আমার জামানত বাজেয়াপ্ত করে দিলে। আমি বলেছিলাম, আগেও দুবার করেছি। এবারও করলাম। আমি তো এখানে অসত্য, মিথ্যা কথা বলিনি। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। আর আমি বক্তব্য দিতেছি, সেখানে ওনারা মাঝখানে বক্তব্য দেবেন। এটা কোনোভাবে হতে পারে না। আমি খুব কষ্ট পাইলাম। এখানে অবশ্যই তাঁদের ডেকোরাম মানতে হবে।’ 

পরে স্পিকার রুলিং দিয়ে বলেন, ‘মাননীয় সদস্যবৃন্দ, জনাব মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে যদি কোনো তথ্যগত ত্রুটি থেকে থাকে, তাহলে সেটা বিবেচনা করে তা পরীক্ষা করে এক্সপাঞ্জ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদে লালমনিরহাট-১ আসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহার হোসেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। সেই নির্বাচনে ৫ হাজার ৩৮১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দ্বিতীয় হওয়া জাসদের সাদেকুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৬ হাজার ৫৫১ ভোট।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007152795791626