একটি সরকারি হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষকসহ দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে এনেছেন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ ইকবাল। ফেসবুকে প্রশ্ননিয়ে নেতিবাচক ও উসকানিমূলক বাক্যও লেখার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ খাগড়াছড়ির রানী নীহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন ও সহকারী শিক্ষক শ্যামা চন্দ্র রুদ্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন ইউএনও। দৈনিকশিক্ষার অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাহী কমকর্তা জাহিদ ইকবাল বলেন, মানিকছড়ি উপজেলার এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খাগড়াছড়ি মডেল থানা থেকে আনতে গত ৮ই জানুয়ারি মানিকছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বা তার প্রাধিকারপ্রাপ্ত একজনকে পাঠানোর নির্দেশ দেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক। এরপর থেকেই রানী নীহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ ইকবালের কাছে অনুরোধ করেন যেন প্রশ্নপত্র আনার দায়িত্বটা তাকেই দেয়া হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এর আগের পাবলিক পরীক্ষায় অবহেলার বিষয়ে তদন্ত চলমান থাকায় তাকে না দিয়ে তার বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্যামা চন্দ্র রুদ্রকে প্রশ্নপত্রসহ অন্যান্য গোপনীয় কাগজপত্র আনার জন্য প্রাধিকার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রাধিকারপত্র জারি করতে গেলে শিক্ষক রুদ্র তা নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং ছুটিতে বাইরে আছেন বলে জানান। বাইরে থাকায় প্রশ্নপত্র আনতে যেতে পারবেন না বলে তিনি বলেন। পরে একাধিকবার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি অস্বীকৃতি জানান। রুদ্র বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া প্রশ্নপত্র আনা সম্ভব নয়। পরে প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন এক চিঠিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেন, শিক্ষক রুদ্র ছুটি নিয়ে স্কুল ত্যাগ করায় তিনি প্রশ্নপত্র আনতে যেতে পারেননি।
জাহিদ ইকবালের অভিযোগ, শিক্ষক রুদ্র যাতে প্রশ্নপত্র আনতে যেতে না পারেন সে জন্য তাকে পরিকল্পিতভাবে তাৎক্ষণিক ছুটিতে পাঠান প্রধান শিক্ষক। এরপর তিনি প্রাধিকারপত্র নিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক পোস্ট করেছেন। প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আনয়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বলে তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেন।
পরবর্তীতে সার্বিক পরিস্থিতি ও পাবলিক পরীক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজারকে প্রাধিকার দিয়ে প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে তা বর্তমানে মানিকছড়ি থানায় নিরাপদে রাখা হয়েছে বলে জাহিদ হাসান নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রধান শিক্ষক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন তার ফেসবুকে লিখেছেন, প্রশ্নপত্র একাডেমিক সুপারভাইজারের হেফাজতে রাখা হয়েছে, উনি কোন গ্রেডের অফিসার? ইত্যাদি হেয়কর, মিথ্যা উস্কানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রমাণ হিসেবে তার স্ক্রিন শটও রয়েছে। আগের পাবলিক পরীক্ষায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাকে আসন্ন পরীক্ষার কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেয়া হবে না ভেবে তিনি এসব নাশকতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন জাহিদ হাসান। এসব কর্মকান্ডে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্যামা চরণ রুদ্রও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে তার।
তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে তারা আগামী ১লা ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষাসহ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষায় যেকোন অনাকাঙিক্ষত ঘটনা ঘটাতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউএনও জাহিদ ইকবাল। তিনি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অনুরোধ করেন।
জানতে চাইলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের কাগজ পাওয়া গেছে গত বৃহস্পতিবার। আজ রোববার মহাপরিচালক ঢাকার বাইরে থাকবেন। কাল সোমবার অফিসে আসলেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।
